করোনাকালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ১২১১ দাফন

ইসলামিক ফাউন্ডেশন
ইসলামিক ফাউন্ডেশন

৪ জুলাইয়ের ঘটনা। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান এক ব্যক্তি। দাফন তো দূরের কথা, ভীতসন্ত্রস্ত এলাকাবাসী খাটিয়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর রেখে জানাজা শেষ করে দাফন করা হয়।

এলাকার সবাই দূরে সরে গেলেও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় দাফনকাজে এগিয়ে আসে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের স্থানীয় দাফন কমিটি। এ জেলায় ১৫টি দাফন সম্পন্ন করেছে এই কমিটি। করোনায় আক্রান্ত বা করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনে সারা দেশে কাজ করছে সংস্থাটি।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক (সমন্বয় বিভাগ) মুহাম্মদ মহীউদ্দিন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মানবতার পাশে দাঁড়াতে সারা দেশে ৬১৪টি স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করছে সংস্থাটির। করোনাকালে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ১ হাজার ২১১টি দাফন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।

স্বেচ্ছাসেবীরা বলছেন, করোনা শনাক্ত বা সন্দেহে মৃত্যু হলেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ লাশ দাফন করতে চায় না। স্বজনেরাও কাছে আসে না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির স্বজনেরাও গৃহবন্দী হয়ে পড়েন এলাকাবাসীর চাপে। দাফনে অংশ নেওয়ায় মসজিদের ইমামের চাকরি চলে গেছে কোনো কোনো এলাকায়। এমন পরিস্থিতিতে ডাক দিলেই ছুটে আসেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দাফন কমিটির সদস্যরা।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, শরিয়া ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন-কাফনের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে দাফন কমিটি। কোভিড-১৯ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৪০৩ জন, চট্টগ্রামে ৩৫৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫০, খুলনা বিভাগে ৮৮, সিলেট বিভাগে ২৭, বরিশাল বিভাগে ১৭০, রংপুর বিভাগে ৭৩ ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৪২ জনের লাশ দাফন করেছেন সংস্থাটির স্বেচ্ছাসেবীরা।

মুন্সিগঞ্জে ৭৩ জনের দাফন করেছে দাফন কমিটি। এক দিনে সাতজনের দাফনও করেছেন বলে জানান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক আবুল কাশেম মজুমদার। তিনি বলেন, লাশ দাফন করতে গিয়ে বিভিন্ন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এলাকাবাসী তিন থেকে চারজন ইমামকে চাকরিচ্যুত করেছে। স্থানীয় জনপ্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।

করোনায় মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনে সহায়তা করতে গত ২৬ মার্চ এলাকাভিত্তিক ৬ সদস্য করে ৬১৪টি দাফন কমিটি গঠন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সর্বোচ্চ সতর্কতায় দাফন করতেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর থেকে জেলা ও উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে মরদেহের কাফন, জানাজা ও দাফনকাজ করছে সংস্থাটি।

ফেনীর উপপরিচালক মো. মনজুরুল আলম মজুমদার বলেন, লাশ দাফন করতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। গভীর রাতে যানবাহনের অপ্রতুলতায় দ্রুত পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। কবর খোঁড়া, লাশ বহনের জন্য খাটিয়া প্রদানসহ বিভিন্ন কাজে অসহযোগিতা করেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া গভীর রাতে দাফনকাজে এলাকাবাসীর প্রতিরোধ বা জনরোষ মোকাবিলা করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়।

দাফন কমিটির কাজ তদারকি করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লক্ষ্মীপুর জেলার উপপরিচালক আশেকুর রহমান এবং মুন্সিগঞ্জের উপপরিচালক আবুল কাশেম মজুমদার।

কিশোরগঞ্জে ৪২ জনের দাফন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। এ জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ ফারুক আহমেদ বলছেন, ধর্মীয় বিধি ও সরকারি নির্দেশনা মেনে তাদের দাফন প্রশংসিত হচ্ছে। এলাকাবাসী স্বেচ্ছাসেবীদের বলছেন, ‘করোনায় অন্তিম শয্যার কারিগর’ বা ‘শেষবিদায়ের কারিগর’।