সুনামগঞ্জে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত মানুষের ঘরবাড়ি এলাকা। পৌর শহরের উকিলপাড়া থেকে আজ রোববার সকালে তোল। ছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত মানুষের ঘরবাড়ি এলাকা। পৌর শহরের উকিলপাড়া থেকে আজ রোববার সকালে তোল। ছবি: প্রথম আলো

বন্যার পানিতে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তবে সুরমা নদীর পানি গতকাল শনিবারের তুলনায় আজ রোববার কিছুটা কমেছে। উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় হাওর এলাকার পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে আজ সকাল নয়টার সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৫০ মিলিমিটার।


গত চার দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রায় সব কটি উপজেলা গত শুক্রবার থেকে আবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। একইভাবে প্লাবিত হয়েছে জেলার চারটি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৯০ ভাগ এলাকায় বন্যার পানি রয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত আছে।


সুনামগঞ্জে গত ২৫ জুন প্রথম দফায় বন্যা দেখা দেয়। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। কিন্তু গত চার দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবার পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।


দ্বিতীয় দফা বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে জেলার সদর, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা। এসব উপজেলার রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-ছাতক, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কে। নতুন করে বন্যার পানি বাড়ছে জেলার দিরাই, শাল্লা, জগন্নাথপুর, ধরমপাশা উপজেলায়।

সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর যাতায়াতের প্রধান সড়ক। আজ রোববার বেলা ১১টায় তোলা। ছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে প্লাবিত সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর যাতায়াতের প্রধান সড়ক। আজ রোববার বেলা ১১টায় তোলা। ছবি: প্রথম আলো

আজ সকালেও সুনামগঞ্জ পৌর শহরের শহরের উকিলপাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, কালিপুর, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, হাসননগর, বড়পাড়া, উত্তর আরপিনগর, মুহাম্মদপুর, হাজীপাড়া, মধ্যবাজার, নবীনগর, ধোপাখালি, নতুনপাড়া এলাকায় রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘরে পানি দেখা গেছে। এসব এলাকায় মানুষের বসতঘরে ঢুকেছে বন্যার পানি। রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

জেলার দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সফি উল্লাহ বলেন, তাঁর উপজেলায় গতকাল রাত থেকে পানি বাড়ছে। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি রয়েছে। এ ছাড়া জেলার কয়েকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।


জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রণজিৎ চৌধুরী বলেন, তাঁর ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রামই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে।


জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার জহিরুল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৬৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ২৭৬টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭০ হাজার ৩২০টি পরিবার। উপজেলাগুলোয় ত্রাণ হিসেবে ৫১০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।


সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, গতকাল বেলা তিনটায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আজ কিছুটা কমেছে। তবে পানি কমছে ধীরগতিতে। তিনি বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী আজকেও পানি বাড়তে পারে। কারণ, উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। তাই পাহাড়ি ঢল নামবে। সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত থাকবে। আগামীকাল সোমবার বিকেল থেকে পানি কমতে পারে।