স্বাস্থ্যবিধি মেনে অধস্তন আদালতে আত্মসমর্পণ করা যাবে: সুপ্রিম কোর্ট

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক-সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা অধস্তন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন। 

আর স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল/চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি দরখাস্তও দাখিল করা যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে গতাকল শনিবার প্রকাশিত প্র্যাকটিস (ব্যবহারিক) নির্দেশনা–সম্পর্কিত পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে ৪ জুলাই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিদের আত্মসমর্পণ–সম্পর্কিত প্র্যাকটিস (ব্যবহারিক) নির্দেশনা প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

এরপর অধস্তন আদালতে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের আত্মসমর্পণ–সম্পর্কিত প্র্যাকটিস নির্দেশনা গতকাল প্রকাশিত হয়, যা ৪ জুলাই দেওয়া নির্দেশনার পরিপূরক হিসেবে গণ্য হবে বলা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান আজ রোববার প্রথম আলোকে বলেন, প্র্যাকটিস নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখন ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ অধস্তন সব আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন।

দুই মিনিটের বিরতি
প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ অধস্তন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারবেন। এ বিষয়ে অধস্তন আদালতের বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট এজলাসকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট আত্মসমর্পণ আবেদন দাখিল এবং শুনানি কার্যক্রমের সময়সূচি এমনভাবে নির্ধারণ ও সমন্বয় করবেন, যাতে কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে আদালত প্রাঙ্গণে এবং ভবনে কোনোরূপ ঝুঁকিপূর্ণ জনসমাগম না ঘটে। আদালত প্রাঙ্গণে এবং এজলাসকক্ষে প্রত্যেককে কমপক্ষে ছয় ফুট শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। সব ধরনের জনসমাগম পরিহার করতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণ এবং আদালত ভবনে জনসমাগম এড়াতে বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিদিন একটি নির্দিষ্টসংখ্যক আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানির জন্য গ্রহণ করবেন। এ–সংক্রান্ত একটি তালিকাসংবলিত বিজ্ঞপ্তি সংশ্লিষ্ট আদালত এবং আইনজীবী সমিতির নোটিশ বোর্ডে প্রচারের ব্যবস্থা করবেন।

একটি মামলায় একজন অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সর্বোচ্চ দুজন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এজলাসকক্ষে একত্রে ছয়জনের বেশি লোকের সমাগম করা যাবে না। তবে একই মামলায় একাধিক আত্মসমর্পণকারী অভিযুক্ত ব্যক্তি থাকলে এজলাসকক্ষের ডকে সর্বোচ্চ পাঁচজন অভিযুক্ত ব্যক্তি অবস্থান করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট ওই ধরনের মামলা একাধিক ভাগে/সেশনে শুনানি করতে পারবেন। এবং সম্পূর্ণ শুনানি সম্পন্ন করে আইনানুগ আদেশ প্রদান করবেন। মামলা শুনানির সময় এজলাসকক্ষের বাইরে আদালতের বারান্দায় বা করিডরে জনসমাগম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানির সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ এবং তাঁর পক্ষে নিযুক্ত আইনজীবী ব্যতীত অন্য কোনো আইনজীবী এজলাসকক্ষে অবস্থান করবেন না। বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট একটি মামলা শুনানি শেষে আইনজীবী ও আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তি/ব্যক্তিদের এজলাসকক্ষ ত্যাগ করার পর দুই মিনিট বিরতি দিয়ে পরবর্তী মামলা শুনানির জন্য গ্রহণ করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এজলাসকক্ষে সবার মুখাবরণ (ফেস মাস্ক) পরিহিত অবস্থায় থাকা অপরিহার্য। আদালতে প্রবেশের সময় সব ব্যক্তির শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। এজলাসকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ শারীরিক দূরত্ব কঠোরভাবে বজায় রাখা নিশ্চিতে তাৎক্ষণিক উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি বিবেচনায় বিচারক/ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে আত্মসমর্পণ দরখাস্ত শুনানি করা থেকে বিরত থাকাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং পরবর্তী নির্দেশ প্রদান না করা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

নালিশি দরখাস্ত
প্রধান বিচারপতি এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক জারি করা স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে অনুসরণ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল/চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশি দরখাস্ত দাখিল করা যাবে।

এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক/চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এজলাসকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। সংশ্লিষ্ট আদালত নালিশি দরখাস্ত দাখিল–পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।

এ বিষয়ে আজ সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এর ফলে এখন প্র্যাকটিস নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের প্রচলিত পদ্ধতিতে ট্রাইব্যুনালসহ সংশ্লিষ্ট আদালতে নালিশি দরখাস্ত দাখিল করা যাবে।

আদালত প্রাঙ্গণে ও ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ জনসমাগম যাতে না ঘটে, সে বিষয় নিশ্চিতের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আদালত প্রাঙ্গণ ও এজলাসকক্ষে প্রত্যেককে কমপক্ষে ছয় ফুট শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য, নালিশ দরখাস্ত শুনানিকালে শুধু ওই দরখাস্ত–সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও অভিযোগকারী পক্ষ এজলাসকক্ষে উপস্থিত থাকবেন। অভিযোগকারীকে আইনানুযায়ী পরীক্ষা করে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে অভিযোগকারীর স্বাক্ষর গ্রহণ ও আদেশের পর ওই আইনজীবী ও অভিযোগকারী পক্ষ এজলাসকক্ষ ত্যাগ করবেন। এর দুই মিনিট পর পরবর্তী দরখাস্তের অভিযোগকারী পক্ষ ও আইনজীবী এজলাসে প্রবেশ করবেন। এজলাসকক্ষে একত্রে ছয়জনের বেশি লোকের সমাগম করা যাবে না।