সেচ প্রকল্পে জলাবদ্ধতা, আমনের আবাদ নিয়ে শঙ্কা

টানা বৃষ্টিতে কৃষিজমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। এতে আমনের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমুয়াকান্দা এলাকা, মতলব উত্তর, চাঁদপুর, ১০ জুলাই। ছবি: মুহাম্মদ জাকির হোসেন
টানা বৃষ্টিতে কৃষিজমিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। এতে আমনের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমুয়াকান্দা এলাকা, মতলব উত্তর, চাঁদপুর, ১০ জুলাই। ছবি: মুহাম্মদ জাকির হোসেন

কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেক কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। জলাবদ্ধতা দূর না হওয়ায় সেখানকার এক হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আমনের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে চাষিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। এর আগে জলাবদ্ধতার কারণে দুই হাজার হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ করা যায়নি।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতর চলতি মৌসুমে আট হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে আমন উৎপাদনের সম্ভাব্য পরিমাণ ধার্য করা হয় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর সেখানে আমন ধান উৎপাদিত হয়েছিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন বলেন, গত মে-জুন মাসজুড়েই ওই সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে টানা বৃষ্টি হয়। এতে সেখানকার অনেক নিচু কৃষিজমি ও বেশ কয়েকটি বিলে দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সেটি দূর করতে পদক্ষেপ নেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ। এতে গত আউশ মৌসুমে দুই হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আবাদ করতে পারেননি চাষিরা।

কৃষি কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন আরও বলেন, চলতি জুলাইয়ের শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। এতে বেড়িবাঁধটির ভেতরে কৃষিজমিতে আগের জলাবদ্ধতার সঙ্গে ওই বৃষ্টির পানি যোগ হয়। এখন এসব জমিতে গভীর জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে চলতি মৌসুমে সেখানকার এক হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে আমনের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে আমুয়াকান্দা, সিপাইকান্দি, ঠেটালিয়া, গজরা, রাঢ়িকান্দি, ছোট ও বড় হলদিয়া, লুধুয়া, ঠাকুরচর, নন্দলালপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকার বেশ কিছু নিচু জমি ও বিলে দৃশ্যত তিন-চার ফুট উচ্চতার জলাবদ্ধতা। গেল আউশ মৌসুমেও এসব জমিতে ধানের আবাদ করা হয়নি। আগাছা, শাপলা ও শেওলায় ভরে গেছে এসব জমি। জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্যোগও চোখে পড়েনি।

উপজেলার আমুয়াকান্দা এলাকার চাষি মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘দুই মাস ধইরা আমার পাঁচ-ছয়টি বড় জমিতে বৃষ্টির পানি আটকাইয়া রইছে। পানি না সরনে মে মাসে হেনো আউশ লাগাইতে পারি নাই। এহন আমন লাগানোর সময়ও চইলা যাইতাছে। তবু পানি সরাইতাছে না। মনে অয়, আমনও লাগাইতে পারুম না। এ নিয়া খুব দুশ্চিন্তায় আছি। খেতে ফসল করতে না পারলে পরিবারকে খাওয়ামু কী? চলুম ক্যামনে? ধারদেনার টেয়াও শোধ দিমু ক্যামনে?’

সেচ প্রকল্পটির ফতেপুর, ঠেটালিয়া ও সেপাইকান্দি এলাকার পানি ব্যবহারকারী দলের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নবী অভিযোগ করেন, বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেক খাল বেদখল হয়ে আছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এগুলো দখল করে স্থাপনা পেতে ব্যবহার করছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জলাবদ্ধতা দূর করারও উদ্যোগ নেই তাদের। এতে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন চাষিরা। জলাবদ্ধতা দূর করতে এবং অবৈধ স্থাপনা সরাতে পাউবোকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে দুটি পাম্প হাউস কাজ করছে। প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি হওয়ায় ওই পানি সম্পূর্ণভাবে সরানো যাচ্ছে না। বেশ কিছু নিষ্কাশন খাল বেদখলে থাকায় নিচু জমির পানি মূল খালে আনা যাচ্ছে না। এ জন্য জলাবদ্ধতা থেকেই যাচ্ছে। তবু জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা চলছে।