রাজধানীতে মাদক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে ওসিদের সরিয়ে দেওয়া হবে

মাদক ব্যবসায় প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে সফল পুলিশ সদস্যদের পুরস্কার দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি। 

ঢাকার মাদক নির্মূল করতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করার পাশাপাশি নানামুখী উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে ডিএমপির সব বিভাগের উপকমিশনারের কাছে এই বার্তা গেছে। ডিএমপির সব মাঠপর্যায়ের সদস্যদের এই কঠোর বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ ৪ জুলাই রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বিশেষ অপরাধ সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, রাজারবাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। মাদকের বিরুদ্ধে শেষ যুদ্ধও রাজারবাগ থেকেই শুরু হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে সরিয়ে দেওয়া হবে। হাত বাড়ালেই মাদক মিলবে আর পুলিশ চাকরি করবে, তা হবে না। সব অপরাধের মূল হলো মাদক। মাদক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অপরাধও কমে আসবে।
৬ জুলাই ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ডিএমপির অপরাধ বিভাগের ও গোয়েন্দা (ডিবি) ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সব উপকমিশনারের কাছে মাদক নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে আনতে দিকনির্দেশনামূলক চিঠি পাঠান।
ডিএমপি কমিশনারের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সমাজ থেকে মাদক নির্মূল ও নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করার পাশাপাশি মাদক–সংশ্লিষ্ট মামলা পেশাদারত্বের সঙ্গে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। ৪ জুলাই রাজারবাগে আইজিপি বেনজীর আহমেদের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যে সভায় উপস্থিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঐকমত্যে পৌঁছান মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা মাদকবিরোধী কার্যক্রমকে প্রাধিকারভুক্ত করে ব্যবস্থা নিলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব। পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থার পক্ষে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়া সম্ভব নয়।
ডিএমপির অপরাধ ও ডিবিতে কর্মরত উপকমিশনাররা প্রথম আলোকে বলেন, ডিএমপি কমিশনারের মাদকবিরোধী অভিযানের দিকনির্দেশনামূলক চিঠি তাঁরা পেয়েছেন। এরই মধ্যে নিজ নিজ এলাকায় তাঁরা মাদকের বিরুদ্ধে নতুনভাবে কাজ শুরু করেছেন।
ডিএমপি কমিশনারের চিঠিতে বলা হয়, মাদকের বিস্তার বৃদ্ধি পেলে অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধ বৃদ্ধি পায়। পুলিশ কার্যকরভাবে তাদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক কাজে লাগালে মাদক কারবারিরা মাদক ব্যবসা চালাতে সাহস পাবে না। এ ক্ষেত্রে ডিএমপি অগ্রপথিক।
চিঠিতে প্রত্যেক উপকমিশনারকে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, সব পুলিশ সদস্যকে মাদকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে ব্রিফ করতে হবে ও তাঁদের করণীয় বিষয়ে ওয়াকিবহাল করতে হবে। মাদক নির্মূলে আইজিপির নির্দেশনা সবাইকে পালন করতে বলতে হবে। মাদক সেবনে জড়িত থাকলে সেই পুলিশ চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং অন্যদের সতর্ক করতে হবে। অধীনদের অপেশাদার অনৈতিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, ব্যবস্থা না নিলে কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসহ প্রতিবেদন না দিলে, তা ইউনিট ইনচার্জদের (ওসি, আঞ্চলিক সহকারী কমিশনার, দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত উপকমিশনার ও উপকমিশনার) ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য হবে।
এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন,‘ডিএমপি কমিশনারের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে কমিশনারের নির্দেশনা আমরা যথাযথভাবে পালন করছি।’
উপকমিশনারদের কাছে পাঠানো ডিএমপি কমিশনারের চিঠিতে বলা হয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় নেতা, জনপ্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সমন্বয় করে মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। শুধু বাহকের বিরুদ্ধে কিংবা গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সীমিত না রেখে পুরো নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। মাদক ব্যবসা করে অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা অনুযায়ী এখন মাদক বহন থেকে শুরু করে, মাদক কারবারি ও পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে ডিবি তৎপর আছে। মাদকের চাহিদা কমাতেও তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন। একই সঙ্গে এসব অপরাধীর তথ্যভান্ডার করার কাজ চলছে। তিনি বলেন, তাঁর ইউনিটে কাজ করে কোনো সদস্য মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারবে না।
ডিএমপি কমিশনারের চিঠিতে আরও বলা হয়, মাদকের চাহিদা হ্রাস করতে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মাদকসেবীদের চিহ্নিত করে তাদের নিয়ে মোটিভেশন সভা এবং থানায় নিয়মিত হাজিরার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মাদকসেবীদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে অভিভাবকদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। উল্লিখিত নির্দেশনার বাস্তবায়ন ও নিজস্ব কলাকৌশল প্রয়োগ করে মাদক নির্মূল এবং নিয়ন্ত্রণে থানার ওসি, অপরাধ বিভাগ ও ডিবির আঞ্চলিক সহকারী কমিশনার (এসি), অতিরিক্ত উপকমিশনার ও উপকমিশনারদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। এতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অপসারণ করা হবে। অভিযানকালে কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হয়রানি করা যাবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) কৃষ্ণ পদ রায় প্রথম আলোকে বলেন, ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাদকের বিস্তার রোধে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।