করোনাকালে বজ্রপাতের অন্য হিসাব

প্রতিবছর পৃথিবীতে বজ্রপাতে মারা যান প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। ছবি: রয়টার্স
প্রতিবছর পৃথিবীতে বজ্রপাতে মারা যান প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। ছবি: রয়টার্স

অনেকেই মনে করেন, বজ্রপাত প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি। কেউ কেউ এটাকে ‘ভয়ংকর সুন্দর’ বলেন। নিরাপদ দূরত্বে বসে অনেকেই প্রকৃতির এই রুদ্রমূর্তির সৌন্দর্য উপভোগ করেন।

কোনো এক বৈশাখে শান্তিনিকেতনের আকাশ, মেঘের পরে মেঘ জমে ঘন অন্ধকার হয়ে যায় দুপুর বেলাতেই। বৃষ্টি নেই, শুধু ঘন ঘন বজ্রপাত। রবীন্দ্রনাথ জানালা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রাণভরে মেঘ–বিদ্যুতের খেলা দেখছিলেন। হঠাৎ দেখলেন বাজ পড়ল কাছের এক খড়ের গাদায়। জ্বলে উঠল আগুন। আতঙ্কে রবীন্দ্রনাথ চিৎকার করে উঠলেন, ‘ওরে তোরা ছুটে যা, হরিচরণের বাড়িতে বাজ পড়েছে। দ্যাখ, তাঁর কিছু হলো কিনা! (‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এর প্রণেতা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন)। শোনা যায়, মীর জাফরের ছেলে মিরনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে, সেটা নাকি ছিল বিনা মেঘে বজ্রপাত। বছর দুয়েক আগে (২০১৮ সালের ১১ জুন) কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে অনুশীলনের সময় বজ্রপাতে মারা যান তরুণ ক্রিকেটার দেবব্রত পাল (২১)।

বাংলাদেশে এ বছরের প্রথম ছয় মাসে বজ্রপাতে ২৪৩ জন মানুষ প্রাণ হারান। এবার এককভাবে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন গাইবান্ধা জেলায় (১৩ জন), হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায় ১১ জন করে এবং নওগাঁ ও ময়মনসিংহ জেলায় ১০ জন করে।

বজ্রপাত কি আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে?
বলা হয় প্রতিবছর পৃথিবীতে বজ্রপাতে মারা যান প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। পৃথিবীর যে কয়টি অঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ, তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। আবার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি। আবহাওয়াবিদদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলে বজ্রপাত বেশি ঘটে থাকে। গ্রীষ্মে এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা বেশি থাকায় এ রকম পরিস্থিতির তৈরি হয়। তাঁদের মতে, গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে—এমন এলাকায় তৈরি হওয়া মেঘে বজ্রপাতের আশঙ্কা থাকে। কোনো কোনো গবেষক বলেন, তাপমাত্রা ১ ডিগ্রি বাড়লে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১০ শতাংশ বেড়ে যায়।

>পৃথিবীর যে কয়টি অঞ্চল বজ্রপাতপ্রবণ, তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত গত ১০ বছরে (২০১০-২০২০/জুন) বজ্রপাতে ২ হাজার ৭৭৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশু ৫২৬, নারী ৪০১ ও পুরুষ ১ হাজার ৮৪৭ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১০ সালে সবচেয়ে কম মোট ১২৩ জন আর ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫০ জন নিহত হন। বাকি বছরগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০–এর মধ্যে এই সংখ্যা ওঠানামা করে।

নেপালের তরাই, ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ রাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে। বিহারে জুনের শেষ ১০ দিনে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১৪৭ জন। মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে হিসাব করলে, এই সংখ্যা দাঁড়াবে ২১৫। এঁদের মধ্যে আছেন কৃষক, শ্রমিক এবং গো-পালক। একইভাবে উত্তর প্রদেশে এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বজ্রপাতে মৃত্যু হয় ২০০ জনের। গত ২৭ জুন শনিবার বিকেলে এক দিনে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলায় বজ্রপাতে কমপক্ষে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন আরও অন্তত ২৯ জন।

নেপাল বলছে, বন্যা বা পাহাড়ধস বা ভূমিধস নয়, এখন সেখানে বেশি মানুষ মরছে বজ্রপাতে। গত চার বছরে সেখানে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৯৩০ জন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম এ ফারুখ বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগর থেকে আসা গরম আর আর্দ্র বাতাসের সঙ্গে উত্তর থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসের সংমিশ্রণ বজ্রপাতের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। তিনি লক্ষ করেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা অনেক বেশি। দেশের আয়তনের তুলনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক বেশি। শীতের শেষে বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ বাতাস আসতে শুরু করে, অন্যদিকে হিমালয় থেকে আসে ঠান্ডা বাতাস। দক্ষিণের গরম আর উত্তরের ঠান্ডা বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয়। এ থেকে তৈরি হয় বজ্রমেঘের। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আরেকটি মেঘের ঘর্ষণে বজ্রের তৈরি হয়। এ রকম উচ্চ ভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে কাছে যা পায়, তাতেই আঘাত করে।

জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব আছে কি?
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁরা মনে করেন, ঘন ঘন বজ্রপাতের পেছনে জলবায়ুর পরিবর্তনের একটা বিশেষ ভূমিকা আছে। তাঁদের মতে, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে চলতি শতকের শেষ নাগাদ বজ্রপাতের হার প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলিতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ডেভিড রম্পস বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতগুলো আরও বেশি ধ্বংসাত্মক হবে। উষ্ণায়নের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প বাড়বে। গবেষকেরা আরও জানান, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাতের হার প্রায় ১২ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। আর চলতি শতকের শেষে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে তখন বজ্রপাত প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

বজ্রপাত কেন এত ভয়ংকর
অন্য সব দুর্যোগে নারী–শিশু–প্রবীণেরা বেশি মারা গেলেও বজ্রপাত কেড়ে নিচ্ছে গ্রামের কর্মঠ পুরুষদের। বজ্রপাতে প্রাণ হারাচ্ছেন সংসারের মূল কর্মক্ষম পুরুষেরা। ফলে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত মারা যাওয়া ১ হাজার ১২৮ জনের মধ্যে ৭৬১ জন পুরুষ অর্থাৎ প্রায় ৬৮ শতাংশই পুরুষ। সংসারের মূল আয়রোজগারের কান্ডারি হঠাৎ চলে গেলে তাঁর ফেলে যাওয়া সংসার ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো দিশা পায় না।

আবার অনেকেই আহত হয়ে বেঁচে থাকেন। আহতদের অনেকেই আর আগের মতো কর্মক্ষম থাকেন না। আমাদের দেশে বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে এককালীন অর্থসাহায্য দেওয়ার রেওয়াজ চালু হয়েছে। এতে মৃতের একটা হিসাব থাকলেও আহতের কোনো হিসাব পাওয়া মুশকিল। তবে ধারণা করা হয়, বজ্রপাতে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ মানুষ আহত হন। নেপালের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ জেলা মাখনপুরে গবেষকেরা আহত-নিহতের হিসাব করে দেখিয়েছেন, প্রতি ৭০ জন নিহতের বিপরীতে সেখানে আহতের সংখ্যা প্রায় ৩০০।

প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধি এবং ব্র্যাকের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী আহতদের অসহায় অবস্থার নানা চিত্র পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের ৮ মে সুনামগঞ্জে ধান মাড়াইয়ের খোলাতেই বজ্রপাতে মারা যান মুসলিম মিয়া, আহত হন ছেলে আবু সালেহ আর জামাতা সমরুজ। একই দিনে বজ্রপাতে আহত হন দিরাইয়ের রফিনগর ইউনিয়নের মজিবর রহমান এবং জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক ইউনিয়নের হটামারা গ্রামের তৈয়বুর রহমান (১৬), আবদুর রহমান (১৬) ও নবী হোসেন (২৩)। তাঁরা সবাই এখন কোনো না কোনো শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

গত বছরের ২ মে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের গোপীনাথপুর গ্রামের আবদুল আজিজ বজ্রপাতে আহত হন। তিনি এখন কানে কিছুই শোনেন না, অস্বাভাবিক আচরণ করেন, কথা বলতে অসুবিধা হয়, শ্বাসকষ্ট এখন তাঁর নিত্যসঙ্গী। রায়গঞ্জ পৌর এলাকার গুনগাতিতে নিজের ছোট্ট মুদিদোকানে বসা অবস্থায় গত ২৫ এপ্রিল বজ্রপাতে আহত হন মজনু মিয়া (৫০)। বাজের প্রচণ্ড শব্দে তিনি জ্ঞান হারান। তিনি এখন খুব অসুস্থ। কথা বলতে পারছেন না। একই দিন একই এলাকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আমিনা ও তার বাবা বেল্লাল হোসেনের চোখ–মুখ ঝলসে যায় বাজের তাপে। এখন তাদের দৃষ্টি ক্রমেই ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে আহতদের জন্য কোনো চিকিৎসা প্রটোকল তৈরি করা হয়নি।

করোনার কারণে বজ্রপাতে শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে গেছে
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ১৩ বছরের তকবির হোসেন হাওরে মাছ ধরতে গিয়েছিল। সেদিন ছিল ২৫ জুন বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার হাট বসে মিলনগঞ্জে। সেই হাটে মাছ বেচে সংসারের জন্য তেল নুন আনাজ কেনার ইচ্ছা ছিল বালক তকবির হোসেনের। দিরাই উপজেলার ললুয়ারচর গ্রামের সেই বালক মাছ ধরার সময় বজ্রাঘাতে আহত হয়। স্থানীয় লোকজন আহতাবস্থায় তকবির হোসেনকে উদ্ধার করে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ‘মৃত ঘোষণা’ করেন। শুধু তকবির নয়, এ বছরে বজ্রপাতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মানুষের অর্থাৎ শিশু–কিশোরদের মৃত্যুর হার আগের সব বছরের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মোট ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছে ৫০ শিশু। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১২ মাসে মোট ২২ শিশু আর ২০১৮ সালে ছিল ৪৪ শিশু। এখনো বছরের প্রায় অর্ধেক সময় বাকি। আশ্বিন–কার্তিকের ঝড়বৃষ্টিতেও বজ্রপাতের তাণ্ডব থাকে। থাকে মৃত্যুর পরোয়ানা। আশঙ্কা করা যায়, এবারের বজ্রপাতে শিশু–কিশোরদের মৃত্যুর হার সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে।

করোনার কারণে স্কুল–মাদ্রাসা অনির্দিষ্টকাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীকে এখন কাজ করে খেতে হচ্ছে। শিশুশ্রমে যোগ দিতে বাধ্য হচ্ছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা। উল্লেখিত ৫০ শিশুর সবাই স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল। মার্চ মাস থেকে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালা–চাবি। অনেকের বাবাদের কাজ নেই। কাজেই সংসারের সম্পূরক আয়ের জন্য কোথাও কোথাও মূল আয়ের জন্য শিশুদের মাঠেঘাটে যেতে হচ্ছে। ফলে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকাগুলোতে শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি আগের যেকোনো সময়ের থেকে এখন অনেক বেশি। মৃত্যুর হিসাব সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রাণরক্ষায় কী ব্যবস্থা নিয়েছে
বছর কয়েক আগে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ‘এখন এটাকে (বজ্রপাত) দুর্যোগ হিসেবে গ্রহণ করেছি। এত দিন পর্যন্ত এটা ছিল গ্রামীণ এলাকাতে। যেমন বিল এলাকা বা হাওর এলাকাতে ছিল, এখন এটা দেখা যাচ্ছে শহর এলাকাতেও। এখন আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি ১০ লাখ তালগাছ লাগাতে। এই গাছগুলো বড় হতে তো সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যে আমরা চাইছি টাওয়ার নির্মাণ করতে। তবে সবার চেয়ে বেশি দরকার সচেতনতা। আমরা টেলিভিশন–রেডিওতে বিভিন্নভাবে সচেতন করার কাজ করছি। স্থানীয়ভাবে আরও কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়ার চিন্তা আছে। আর ১০৯০ নম্বরে ফোন করে যে কেউ কোথায় বৃষ্টি হবে, কোথায় বিজলি চমকাবে, সেটা জানতে পারবে।’ বলা বাহুল্য, এসবই ছিল স্বপ্নিল ইচ্ছার মুগ্ধ বয়ান ‘লিস্ট অব গুড উইশ’। লোক দেখানো তালগাছ লাগানো হয়েছে কোথাও রাস্তার পাশে, কোথাও অফিসের ধারে। হাওর–বাঁওড়, বিল–মাঠে মানুষ মরে আর তালগাছের চাষ হয় রাস্তায়।

গ্রামগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষদের পক্ষে ফোন করে বৃষ্টিবাদলার খবর নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়ার বিলাসিতা চলে কি না, সেটাও ভাবা হয়নি ১০৯০ নম্বর চালু করার আগে। হাওরের কৃষকের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী লাইটেনিং এরেসটার (বজ্র প্রতিরোধক) টাওয়ার লাগানো হয়নি একটিও। সম্প্রতি এক টক শোতে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অর্থাভাবের কথা বলেন। তবে ২০ কোটি টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আটটি লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সরের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। বলা হচ্ছে, বজ্রপাতের বিষয়ে দেশবাসীকে আগাম সতর্কবার্তা দিতে এসব যন্ত্রপাতি। ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা, পটুয়াখালী ও চট্টগ্রামে এই সেন্সর বসানো হয়েছে। এসবের হয়তো একাডেমিক মূল্য আছে। কিন্তু মাঠের কৃষককে বজ্রপাতের হাত থেকে এখনই কোনো রেহাই দেবে না। আমরা জানি, বন্যা এবং সাইক্লোনের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও বজ্রপাতের বিষয়টি অনেকটা ভূমিকম্পের মতোই আকস্মিক। ‘লাইটেনিং ডিটেকটিভ’–এ সংকেত পেয়ে সেটা মাঠে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অরক্ষিত কৃষক জেলে বা গরুর রাখাল মরে শেষ হয়ে যাবে। চিন্তা করতে হবে কীভাবে মাঠে থাকা মানুষটিকে মাঠেই আমরা সুরক্ষা দিতে পারি। ভিয়েতনাম, নেপাল মাঠে মাঠে লাইটেনিং এরেস্টার লাগিয়ে ভালো ফল পেয়েছে। আমরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে পারি। মাঠে মাঠে তালগাছ, খেজুরগাছ লাগানোর পাশাপাশি তালগাছ কাটা বন্ধের তাগিদ দিতে পারি।