তিস্তার ব্যারাজ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি

তিস্তা ফুলে উঠে তলিয়ে যাচ্ছে বসতঘর। ভাঙনের মুখে বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন লোকজন। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের টাপুর চর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
তিস্তা ফুলে উঠে তলিয়ে যাচ্ছে বসতঘর। ভাঙনের মুখে বসতঘর সরিয়ে নিচ্ছেন লোকজন। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের টাপুর চর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

নীলফামারীতে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ। আজ সোমবার সকাল আটটায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গতকাল রোববার রাত ১২টায় সেখানে পানি প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপরে। তিস্তার ব্যারাজ এলাকা ও এর আশপাশ এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তিস্তার এমন রুদ্রমূর্তিতে রাতেই ব্যারাজ এলাকায় ছুটে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ। দীর্ঘ সময় অবস্থান করে তিনি ঘুরে দেখেন ব্যারাজ ও ফাড বাইপাস এলাকা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম, নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) একেএম সামসুজোহা ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী হাফিজুল হক।

উজানের ঢলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার অতিক্রম করে গত শুক্রবার। সেই থেকে বিপৎসীমার ওপরে চলছে পানি প্রবাহ। টানা চার দিনের ঢলে জেলার ডিমলা উপজেলার নদী বেষ্টিত পূর্বছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপনী, পশ্চিমছাতনাই ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের পাঁচ হাজার পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে এসব পরিবারের লোকজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রমতে, উজানের ঢলে রোববার রাত ১২টায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আজ সকাল আটটায় কিছুটা কমে ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

বসতঘর ও আবাদি জমি হারিয়ে দিশেহারা অনেকেই। ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
বসতঘর ও আবাদি জমি হারিয়ে দিশেহারা অনেকেই। ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামা গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে শুক্রবার দুপুরে। সেদিন রাতে পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ৩৩ সেন্টিমিটার ও রোববার সন্ধ্যা ছয়টায় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পয়েন্টে নদীর পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার।

চলতি বর্ষায় তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে গত ২৬ জুন। সেদিন সকাল থেকে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অব্যাহত থাকে ২৮ জুন পর্যন্ত। ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত বিপৎসীমার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। ৪ জুলাই দ্বিতীয় দফায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ৬ জুলাই থেকে ১০ জুলাই সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। সেদিন দুপুরে বিপৎসীমার ওপরে উঠলে রাতে ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, তিস্তা ব্যারাজের পানি ধারণক্ষমতা সাড়ে চার লাখ কিউসেক। এর বেশি প্রবাহ হলে পানি অপসারণের জন্য ফাড বাইপাস খুলে দিতে হয়। রোববার রাতে ফাড বাইপাস খুলে দেওয়ার কাছাকাছি পানি প্রবাহ পৌঁছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।