চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহ কমে অর্ধেক

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

চট্টগ্রামের পরীক্ষাগারে কোভিড-১৯ রোগ শনাক্তের নমুনার স্তূপ নেই। বুথগুলোতে নেই নমুনা দেওয়ার ভিড়। হঠাৎ করে নমুনা সংগ্রহ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে করোনার প্রকোপ আবার বাড়তে পারে বলে চিকিৎসকেরা আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে কোরবানির ঈদের সময় করোনা আরেকটি বড় ধাক্কা দিতে পারে। তাই এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, করোনার নমুনা সংগ্রহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ, সরকারি ফি ধার্য করা। এতে নিম্ন আয় বা নিম্নমধ্যম শ্রেণির পরিবারের লোকজন কোভিড রোগ শনাক্তে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। দ্বিতীয়ত, প্রথমবার কোভিড শনাক্তের পর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দ্বিতীয়বার পরীক্ষায় নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তৃতীয়ত, নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে বিলম্ব হওয়া। কখনো কখনো তা দুই সপ্তাহ পর্যন্ত লাগছে। এ ছাড়া জ্বর বা উপসর্গ দেখা দিলে লোকজন পরীক্ষা ছাড়াই ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মূলত এসব কারণে চট্টগ্রামে নমুনা সংগ্রহ প্রায় অর্ধেকে নেমে আসছে।

উদ্বেগের কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রামে এই মুহূর্তে ল্যাবে গড়ে দেড় হাজার নমুনার পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। এখন নমুনা অর্ধেকে নেমে আসাটা চিন্তার বিষয়। তিনি গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনের পরীক্ষা বিনা মূল্যে করতে এনজিওগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, ‘উপসর্গ দেখা দিলে সবারই পরীক্ষা করা উচিত। এতে রোগ শনাক্ত হলে কোভিড রোগীকে আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, চিকিৎসা দিতে হবে। এনজিও ছাড়াও গ্রামে যাঁদের ভিজিএফ কার্ড আছে, তাঁরা বিনা মূল্যে পরীক্ষা করতে পারেন কি না, তা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভেবে দেখতে পারেন। আমরা চাই, বেশি বেশি পরীক্ষা হোক।’

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানান, নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ার লক্ষণও ভালো নয়। এতে উপসর্গ নিয়ে কোভিড আক্রান্ত লোকজনের বিচরণ জনবহুল এলাকায় আরও বেড়ে যাবে। তাতে সংক্রমণও বাড়বে। এটা আর বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না।

উদাহরণ দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেক দেশ বাংলাদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করছে। কারণ, ইতালিগামী একটি উড়োজাহাজে কোভিড রোগী পাওয়া গেছে। এসব খবর দেশের জন্য সুখকর নয়; বরং ক্ষতিকর। যত বেশি পরীক্ষা হবে, তত বেশি রোগী শনাক্ত হবেন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গরিব রোগীদের পরীক্ষার খরচ বহনের জন্য আমরা বেসরকারি সংস্থা, তথা এনজিওর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছি। এ ছাড়া গ্রামের লোকজন ভিজিএফ কার্ড দেখিয়ে বিনা মূল্যে কোভিড পরীক্ষা করতে পারবেন কি না, আমরা তার চেষ্টা করছি। আমরাও চাই, উপসর্গ থাকা সবার পরীক্ষা করাতে।’

 চট্টগ্রামে গত শুক্রবার ১ হাজার ৯৯টি নমুনার পরীক্ষা হয়েছে, যা ল্যাবগুলোর সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশ। আগের দিন বৃহস্পতিবার পরীক্ষা হয়েছে ৭৮৬টি নমুনার। শনিবার পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৪২৫টি। অথচ এর আগে গড়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত চট্টগ্রামের ল্যাবগুলোতে পরীক্ষা হয়েছে।

চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ ছাড়াও ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ও শেভরন হাসপাতালে কোভিড রোগ শনাক্তের পরীক্ষা হচ্ছে। চট্টগ্রামে আরও একটি বেসরকারি ল্যাবে পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি চলছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাব প্রধান অধ্যাপক এহসানুল হক প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের কাছে কোনো নমুনা জমা নেই। তাঁরা যা পাচ্ছেন, সবই পরীক্ষা করে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল দিয়ে দিচ্ছেন। এহসানুল হক বলেন, ‘আগে আমরা গড়ে চার শতাধিক নমুনা পেতাম। গত ১০–১২ দিন ধরে তা ১৮০ থেকে ২০০-তে নেমে এসেছে। আমরা এই মুহূর্তে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ পরীক্ষা করতে পারি। কিন্তু নমুনা অর্ধেকে নেমে আসায় চাপ কমে গেছে।’

ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের ল্যাব প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘২০০ টাকা ফি ধার্য করার কারণে অনেকে নমুনা দিচ্ছেন না। আমরাও আমাদের সক্ষমতার অর্ধেক বা এর কম নমুনা পাচ্ছি। এখন যা পাচ্ছি, তা পরদিন রাতের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করে ফলাফল জানিয়ে দিচ্ছি।’