ফুঁসছে তিস্তা, না খেয়ে আছে পানিবন্দীরা

তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে বন্যাকবলিত মানুষ। গতকাল দুপুরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা গ্রামে।  ছবি প্রথম আলো
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে বন্যাকবলিত মানুষ। গতকাল দুপুরে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা গ্রামে। ছবি প্রথম আলো

রোববার রাতে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল তিস্তা নদী। বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল নদীটির পানি। এ অবস্থায় লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা বাঁধ ও বাঁধসংলগ্ন ফ্লাড বাইপাস এলাকায় ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সরিয়ে নেওয়া হয় ওই এলাকার লোকজনকে। সোমবার সকালে পানি কিছুটা কমলে সকাল ৯টায় ওই রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহার করা হয়।

পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের তিস্তার চরের প্রায় ১৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। দেখা দিয়েছে খাবারের সংকট। মানুষগুলোর দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে।

খালিশা চাঁপানী ইউনিয়নের ছোট খাতা গ্রামের বাজাহার আলীকে (৬০) রেড অ্যালার্টের কারণে বাড়ি ছাড়তে হয়েছে। স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক নাতিকে নিয়ে তিস্তা ডান তীর বাঁধের ধারে একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গতকাল সোমবার তিনি বলেন, ‘তিন–চাইর দিন থাকি পানি বাড়েছে, কাইল এত বেশি বাইরছে আইতত (রাতে) বাড়িঘর ফেলে বান্ধের পাড়ত মাইনসের বাড়িত আছিনো। পানি কইমলে বাড়ি যাবার নাইগবে।’ করোনার কারণে পেশায় বাবুর্চি বাজাহারের রোজগার বন্ধ প্রায় চার মাস। এর মধ্যেই বন্যায় পরিবারের খাবার জোগানো নিয়ে দিশেহারা তিনি।

একই গ্রামের ডালিমন বেগম (৪৫) বলেন, ‘আইত থাকি না খেয়া আছি, ছাওয়া–পোয়া নিয়া খুব কষ্ট।’

করোনার কারণে আয় বন্ধ, ঘরটাও বন্যায় নষ্ট হয়েছে ছোট খাতা গ্রামের বর্গাচাষি সহিদুল ইসলামের (৫৫)। তিনি বলেন, ‘করোনার
জইন্য বাহিরত কাম করির যাবার পাইছি না। তার ওপর বন্যা সব শেষ করি দিছে। ঘরটাও নষ্ট হইছে। এখন তো খাওয়াই ঠিকমতো জুটে না, ঘর ঠিক করমো কী দিয়া।’

>তিস্তার চরের প্রায় ১৫টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁদের।

প্রায় একই রকম তিস্তাপারের বন্যাকবলিত ডিমলা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের। টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের টাপুর চর, পূর্ব খড়িবাড়ি, দীঘির পাড়, পাগলীর বাজার, উত্তর খড়িবাড়ি ও দক্ষিণ খড়িবাড়ি গ্রামের ১ হাজার ৭০০ পরিবার পানিবন্দী হয়ে আছে। এরই মধ্যে ২৪টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পরিবারগুলোর মধ্যে এখন শুকনো খাবার বেশি প্রয়োজন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘রোববার দিবাগত রাত ৯টার দিকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যারাজ ও ফ্লাড বাইপাস এলাকায় রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। পানি কিছুটা কমলে সকাল ৯টায় রেড অ্যালার্ট প্রত্যাহার করা হয়। বিকেল তিনটায় পানি আরও কমে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন, ‘তিস্তা ব্যারাজের পানি অপসারণক্ষমতা প্রতি
সেকেন্ডে রয়েছে সাড়ে চার লাখ কিউসেক। এর বেশি প্রবাহ হলে পানি অপসারণের জন্য ফ্লাড বাইপাস খুলে দিতে হয়। গত রাতে ওই ফ্লাড বাইপাস খুলে দেওয়ার কাছাকাছি পানিপ্রবাহ পৌঁছায়। এ কারণে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছিল। পানি কমে যাওয়ায় সোমবার সকালে তা প্রত্যাহার করা হয়।’