নেত্রকোনায় কমছে বন্যার পানি, দুর্ভোগ কমেনি

নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানিও কমছে। তবে কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি কমলেও বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ কমছে না। ঘরের ভেতর পানি থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন অনেকে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় ওই দিন সন্ধ্যা থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় গতকাল পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৮৫ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী ছিলেন। এর মধ্যে কলমাকান্দায় অন্তত ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী। তবে পানি কমলেও এখনো কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে জানান, জেলার সব কটি প্রধান নদ-নদীর পানিই কমছে। কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৮৯ মিটার। সেখানে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ১৩ দশমিক ৮২ মিটার। ওই নদীর দুর্গাপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৫৫ মিটার। সেখানে বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে ১০ দশমিক ৬৭ মিটার। কংস নদের জারিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৫৫ মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৯ দশমিক ৫১ মিটার। আর খালিয়াজুরির ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমা ৭ দশমিক ১২ মিটার, সেখানে প্রবাহিত হচ্ছে ৬ দশমিক ৬৭ মিটার।

মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পানি আরও কমতে পারে।

এদিকে পানি কমলেও বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। কলমাকান্দা, খালিয়াজুরিতে এখনো অন্তত দেড় শতাধিক মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় কলমাকান্দার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। কলমাকান্দার সীমান্তবর্তী জগন্নাথপুর এলাকায় গণেশ্বরী নদী পাড়ি দিতে গিয়ে গতকাল সন্ধ্যায় পুতুল ঘাঘড়া (৫৫) নামের এক ব্যক্তি স্রোতের পানিতে ভেসে নিখোঁজ হন। আজ দুপুরের দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার হয়।

বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি বাঁধ, উঁচু স্থানসহ সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব মিটছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে অভিযোগ অনেকের।

খালিয়াজুরি হাওরে পানি কমলেও আফালে বাড়ি ভাঙন বেড়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক তালুকদার জানান, কলমাকান্দায় গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে পানি অনেকটাই কমেছে। তবে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, উপজেলা পরিষদ, ইউএনও কার্যালয়সহ বিভিন্ন অফিস, হাটবাজার এখনো পানির নিচে রয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘উপজেলার আটটি ইউনিয়নের জন্য ৭০ মেট্রিক টন জিআর, নগদ ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত দুই দিনে ১ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করেছি। আজ আরও ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হবে।’

কলমাকান্দা পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আবদুল মান্নান (৩৮)। তাঁর বাড়ি উত্তর চানপুর গ্রামে। বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসেন। তিনি জানান, শুধু রোববার তিনি এক প্যাকেট শুকনা খাবার পেয়েছিলেন। সেটা এক দিনেই শেষ হয়ে গেছে। এখন তিনি নিজের টাকায় কিনে খাচ্ছেন। বারবার নিজে কিনে খাওয়ার মতো সে রকম অর্থও তাঁর কাছে নেই।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বানভাসি মানুষ যাঁরা খাবার পাচ্ছেন না, খোঁজ নিয়ে তাঁদের খাবার দেওয়া হবে। কাউকে না খেয়ে থাকতে হবে না।

জেলা প্রশাসক জানান, জেলায় ৪০০ মেট্রিক টন জিআর, নগদ আট লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য দুই লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য টাকা দুই লাখ টাকা এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।