উজানের ঢল-বর্ষণে গঙ্গাচড়ায় তিস্তার বাঁধ ঝুঁকিতে

মাত্র ৪০ ফুট দূরে বাঁধ। ঝুঁকিতে থাকা বাঁধ রক্ষায় ফেলা হচ্ছে বালুর বস্তা। ছবিটি সম্প্রতি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম
মাত্র ৪০ ফুট দূরে বাঁধ। ঝুঁকিতে থাকা বাঁধ রক্ষায় ফেলা হচ্ছে বালুর বস্তা। ছবিটি সম্প্রতি রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী এলাকা থেকে তোলা। ছবি: মঈনুল ইসলাম

কয়েক দিনের বর্ষণ আর উজানের ঢলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা বাঁধটি মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। উপজেলার নোহালী এলাকায় অবস্থিত তিস্তা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধটি (মূল বাঁধ) নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে ভাঙন-আতঙ্কে রয়েছে নদীতীরবর্তী পরিবারগুলো। 

গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ২০ দিনের ব্যবধানে নোহালী ইউনিয়নের ১৫০টি পরিবারের বসতভিটা, আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আরও শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে রয়েছে।

তিস্তা নদীর ভাঙন রোধে ও বাঁধ রক্ষায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ভিত্তিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী নদীতীরবর্তী এলাকায় বালুর বস্তা ফেলছে।

উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের নোহালী, ফোটামারি ও কুমারপাড়া এলাকার তিন স্থান তিস্তা নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে। এ তিন গ্রামের গ্রামের ৪০০ পরিবারের মধ্যে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে ১৫০টি পরিবারের বসতভিটা ও আবাদি জমি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, নোহালী ইউনিয়নের তিনটি এলাকায় ৬৪০ মিটার এলাকাজুড়ে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই তিন স্থানের মধ্যে একটি স্থানে নদীর ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে ৪ হাজার ৮০০ বালুর বস্তা ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। আর একটি স্থানে ১০ হাজার বস্তা ফেলা হবে। ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামে ৫ হাজার ৭০০ বস্তা বালুর বস্তা ফেলার কাজ চলমান।

ভাঙনকবলিত লোকজন জানান, এ গ্রামের অনেকেই আবাদি জমি, বসতভিটা হারিয়ে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন। তাঁরা ঘরবাড়ি সরাতে পারলেও তাঁদের বসতভিটা, বাঁশঝাড়, গাছগাছালি, আবাদি জমি—সবই চলে গেছে নদীতে। নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ, অন্যের ভিটেমাটিসহ বিভিন্ন স্থানে কোনোরকমে ঠাঁই নিয়েছেন তাঁরা।

কুমারপাড়া এলাকার কৃষক দীনেশ চন্দ্র রায়ের গত বছর কিছু আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কয় দিন আগোত অল্প কিছু আবাদি জমিও নদী খায়া ফেলাইল। আর কিছুই থাকিল না।’

নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভাঙনকবলিত এলাকা ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ইলিয়াছ আলী বলেন, যেভাবে নদীর ভাঙন দেখা দিয়েছে, তাতে এবার মূল বাঁধ হুমকির মধ্যে রয়েছে। বাঁধ থেকে নদীর দূরত্ব প্রায় ৪০ ফুট।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ওই এলাকার ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আধা কিলোমিটারের একটু বেশি এলাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।