জব্দ করা সেই পাথর ৯৪ লাখ টাকায় বিক্রি

সিলেটে সুরমাতীর অবৈধভাবে ব্যবহার করে কোটি টাকার পাথর ভাঙার কল (স্টোন ক্র্যাশার মিল) ধ্বংস করে জব্দ পাথর ৯৪ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার প্রকাশ্যে তিনটি পৃথক নিলাম ডাকের মাধ্যমে ৯৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় পাথরগুলো বিক্রি করা হয়। সিলেট জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর সোমবার দিনভর অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা মূল্যের ২৩টি অবৈধ পাথর ভাঙার কল ধ্বংস করে। সুরমাতীর অবৈধভাবে ব্যবহার করায় সেখানে মজুত করা পাথরগুলোও জব্দ করা হয়েছিল।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, প্রথম দফায় সুরমার ফেরিঘাট এলাকায় জব্দ করা ৮০ হাজার ঘনফুট পাথর প্রকাশ্য নিলাম ডাকে ৫১ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিকেলে আরও দুটি নিলাম ডাকে অবশিষ্ট পাথর বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে ৯৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার পাথর নিলাম ডাকে বিক্রি করা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলে অবৈধভাবে পাথর পরিবহন ও মজুত বন্ধে এটিই সবচেয়ে বড় নিলাম ডাক বলে জানান তিনি।

এবারের বর্ষা মৌসুমে অবৈধভাবে মজুত করা পাথর জব্দ করার প্রথম ঘটনা ঘটেছিল সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের তীরে। গত ৯ জুলাই অবৈধভাবে মজুত করা পাথর প্রকাশ্যে নিলাম ডাকের মাধ্যমে বিক্রি করে ৯ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। ধলাই নদের তীরে জব্দ করা পাথর প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রির পর দ্বিতীয় পর্যায়ে সুরমা নদীতীরে জব্দ করা পাথর নিলামে বিক্রি হলো। এর মধ্য দিয়ে সিলেটে অবৈধ পাথর–বাণিজ্য বন্ধ করে গত এক সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে কোটি টাকার বেশি জমা পড়ল।

সুরমা নদীতে পানি বাড়ায় নৌপথে আনা হচ্ছিল বোল্ডার পাথর। এসব পাথর সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুর এলাকায় নদীতীরে স্তূপ করে রেখে রাতারাতি পাথর ভাঙার কয়েকটি কল (স্টোন ক্র্যাশার মিল) স্থাপন করে চলছিল উন্মুক্ত স্থানে পাথর ভাঙার কাজ। নীতিমালা অনুযায়ী নদীতীরে স্থাপিত কলগুলো ছিল অবৈধ। আর নদীতীরও ব্যবহার করা হচ্ছিল অবৈধভাবে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে সোমবার অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা মূল্যের ২৩টি পাথর ভাঙার কল বিকল এবং সুরমাতীরে অবৈধভাবে রাখা সব পাথর জব্দ করা হয়।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জব্দ করা পাথর উন্মুক্ত নিলাম ডেকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে ও বিকেলে তিনটি পৃথক নিলাম ডাকে পাথরগুলো বিক্রি করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পাথর ভাঙার কল স্থাপনে ‘স্টোন ক্র্যাশার মেশিন স্থাপন নীতিমালা-২০০৬’ নামের একটি নীতিমালা রয়েছে। এতে উল্লেখ রয়েছে, শহর, উপজেলা সদর, পৌরসভা এলাকায় স্টোন ক্র্যাশার মেশিন স্থাপন করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বসতবাড়ি, প্রধান সড়ক ও মহাসড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে এবং কৃষিভূমি বা বন বিভাগের ভূমিতে স্টোন ক্র্যাশার মেশিন স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না। কিন্তু তা উপেক্ষা করে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে সহস্রাধিক পাথর ভাঙার কল স্থাপন করা হয়েছে।

যত্রতত্র স্থাপন করা পাথর ভাঙার কলের গুঁড়ো জনজীবন ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলায় বাংলাদেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত পাথর ভাঙার কল পরিচালনার জন্য একটি ‘জোন’ করার নির্দেশনা দেন। জেলা প্রশাসন নীতিমালার আলোকে পাথর ভাঙার কলগুলো একটি অঞ্চলভুক্ত (জোন) করে পরিচালনার জন্য গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল এলাকায় ১৩৩ একর জায়গাকে ‘স্টোন ক্র্যাশার জোন’ করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।