নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৫০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে চীন

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করবে চীন। আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে সমান মালিকানায় যৌথ অংশীদারত্ব কোম্পানি গঠনে চুক্তিটি সই হয়।

এটির নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) রিনিউএ্যাবল। বিসিপিসিএল রিনিউএ্যাবল দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি যা চীন থেকে আসবে।

মঙ্গলবার ঢাকা থেকে এনডব্লিউপিজিসিএল এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম খোরশেদুল আলম ও বেইজিং থেকে সিএমসির চেয়ারম্যান রুয়ান গুয়াং অনলাইনে চুক্তিতে সই করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, অ-কৃষি জমির অপ্রতুলতার জন্য সৌর শক্তি ব্যবহার করে বড় আকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা যাচ্ছে না। ছাদে সৌর বিদ্যুৎ এবং ভাসমান সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিভিন্ন উৎস হতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগের ক্ষেত্রও প্রসারিত হয়েছে। দেশে এখন ২৩ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ২২০.৭৭ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ চলছে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সিএমসির চেয়ারম্যান রুয়ান গুয়াং অনলাইনে প্ল্যাটফর্মে জুমে বলেন, সিএমসি আধুনিক প্রযুক্তি এবং দক্ষকর্মি দল নিয়ে বাংলাদেশের পাশে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত পাশে থাকবে। চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে সব সময় সহযোগিতা করতে চায়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিং পিং এর বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সফলের মধ্যে দিয়ে ঢাকা বেইজিং এর সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিসিপিসিএল রিনিউএ্যাবলের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার বিষয়ে এনডব্লিউপিজিসিএলের সিইও এ. এম. খোরশেদুল আলম বলেন, ‘সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ১০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং সুইডেন শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকারও চাইছে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। আমরা ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নবায়ন শক্তি থেকে উৎপাদন করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি সেখানে সিরাজগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াট, পাবনার সুজানগরে ৬০ মেগাওয়াট এবং বেড়াতে ১০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালীর পায়রাতে ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

চুক্তি সই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, চীন মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪২ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন করছে। বাংলাদেশের এই উদ্যোগের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমবে। যা পরিবেশ সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে।

দেশে বর্তমানে ২০ হাজার ৩৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এ হিসেবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। সরকারের দাবি অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৩৬০ মেগাওয়াট। ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে যুক্ত না। এর মধ্যে পাকিস্তান আমলে রাঙামাটির কাপ্তাই ২৩০ মেগাওয়াটের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত সব থেকে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর বাইরে সৌর দেশের বড় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র টেকনাফে ২০ মেগাওয়াট। এ ছাড়া অন্য সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র আকারে খুবই ছোট। সরকার বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। এ জন্য সরকারি কোম্পানিকে দিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছে।

বিদ্যুৎ সচিব সুলতান আহমেদের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. বেলায়েত হোসেন বক্তব্য দেন।

বিসিপিসিএল রিনিউএ্যাবল গঠনের জন্য গত বছর ২৭ আগস্ট সিএমসি এবং এনডব্লিউপিজিসিএল একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। গত ৮ জুন মন্ত্রিসভা কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর আগে গঠিত বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসিএল) পায়রাতে দুটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে। ইতোমধ্যে একটি কেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট উৎপাদন শুরু করেছে।