ঘরে ঘরে বুকসমান পানি
ঘরে বুকসমান বানের পানি। কখনো প্রখর রোদ, আবার কখনো প্রচণ্ড বৃষ্টি। আশপাশের কোথাও আশ্রয়কেন্দ্র নেই। পানির ওপর মাচা করে খোলা স্থানে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন ছখিনা বেগম নামের এক নারী। পাঁচ দিন ধরে নড়বড়ে বাঁশের ছোট্ট একটি মাচায় ছেলেমেয়েদের নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন এবং মাচার ওপরই খেয়ে না–খেয়ে রয়েছেন তাঁরা।
আশপাশে কোথাও শুকনা জায়গা নেই। দিনমজুর স্বামীর হাতে টাকাপয়সাও নেই। বুধবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বন্যাদুর্গত জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চিকাজানী ইউনিয়নের চর ডাকাতিয়া গ্রামে এই পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়। এই পরিবারের মতোই দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বন্যার্ত মানুষেরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে।
এই এলাকার পূর্ব অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে নদীভাঙনের শিকার হয়ে পাঁচ শতাধিক পরিবার ইতিমধ্যেই সর্বস্বান্ত। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বন্যা শুরু হয়েছে। পানিবন্দী লক্ষাধিক মানুষ। অনেক সবজিখেত, বীজতলা এখন পানির নিচে। অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্যসহ নানা সংকট। চোখে অন্ধকার দেখছে এখানকার মানুষ।
গুরুত্বপূর্ণ ফুটানিবাজার নৌকা ঘাট-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে এখন বুকসমান পানি। সড়কের ওপর দিয়ে নৌকা চলাচল করছে। তার আশপাশের বাড়িঘরে কোথাও বুক, কোথাও আবার কোমরসমান পানি। অনেক বাড়ির ভেতর দিয়ে পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। অনেকের মাছভর্তি পুকুর ভেসে গেছে। গবাদিপশু নিয়ে পরিবারের পুরুষেরা বালুগ্রাম সড়কের দুই পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে গেছে। সেখান থেকে নৌকায় উঠে যত দূর চোখ যায়, পানি আর পানি। ঘরবাড়িগুলো ডুবে রয়েছে। বেশির ভাগ ঘরবাড়ি জনশূন্য। অনেকেই আবার ঘরের ভেতর মাচা করে রয়েছেন। এমন একজন রাবেয়া আক্তার। তাঁর ঘরে বুকসমান পানি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই ঘরের ভেতর মাচা পেতেছেন। সেখানেই দিনে একবার রান্না করেন। রয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। তাঁর আরও সাতজন প্রতিবেশীরও একই অবস্থা। বন্যার্ত প্রতিটি গ্রাম, পাড়া–মহল্লায় একই দুর্ভোগের চিত্র। কোথাও জনপ্রতিনিধি বা নেতাদের কোনো তৎপরতা লক্ষ করা যায়নি। কয়েকটি এলাকায় সামান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে বলে জানা গেল। বন্যার্ত বেশির ভাগ এলাকায় এখনো কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি।
দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে এখনো পানি। পানি উঠে যাওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সড়ক ডুবে যাওয়ায় দেওয়ানগঞ্জ থেকে সানন্দবাড়ী, রাজীবপুর ও রৌমারির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদেও বুকসমান পানি। এতে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
চর ডাকাতিয়া গ্রামের বুলবুল আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় দফায় টানা ছয় দিন ধরে বন্যার্তরা খেয়ে না–খেয়ে জীবন যাপন করছেন। বন্যার্তদের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কোনো লোকজন এলাকায় আসেননি। একদিকে বানের পানি বাড়ছে, অন্যদিকে বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে বেশির ভাগ মানুষ। এই সংকটময় মুহূর্তে তারা কাউকেই পাশে পাচ্ছে না।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা রাজিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সব জনপ্রতিনিধিকে দুর্গত এলাকায় গিয়ে বন্যার্তদের খোঁজখবর রাখা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনেক এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। দুর্গত সব এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো হবে।