নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অধিকাংশ রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে। বুধবার বিকেলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মনতলা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অধিকাংশ রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে। বুধবার বিকেলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার মনতলা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নেত্রকোনায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি আরও উন্নতি হয়েছে। যদিও এখনো বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়িতে পানি রয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো আছে শতাধিক মানুষ।

বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। কলমাকান্দার উব্দাখালি নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় কলমাকান্দা, খালিয়াজুরি, মদন, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা ও দুর্গাপুরে ৮৫ হাজারের মতো মানুষ পানিবন্দী ছিল। এর মধ্যে কলমাকান্দাতেই অন্তত ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দী ছিল। পানি কমলেও এখনো প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী। এর মধ্যে কলমাকান্দায় অন্তত ৩৫ হাজার মানুষ রয়েছে। কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর কলমাকন্দা পয়েন্টে পানি এখনো বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

সন্ধ্যায় জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, জেলার সব কটি প্রধান নদ-নদীর পানিই কমছে। কলমাকান্দায় উব্দাখালি নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর বিজয়পুর পয়েন্ট, কংস নদের জারিয়া পয়েন্ট ও খালিয়াজুরির ধনু নদের খালিয়াজুরি পয়েন্টে বিপৎসীমা এক থেকে দুই মিটার নিচে রয়েছে।

এদিকে পানি কমলেও এখনো কলমাকান্দার সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি বাঁধ, উঁচু স্থানসহ সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব মিটছে না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বন্যায় জেলায় প্রায় এক হাজার ২০০ কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা–পাকা সড়ক তলিয়ে যায়। এখনো ৮০০ কিলোমিটারের মতো সড়ক পানির নিচে রয়েছে। তবে পানি যেভাবে কমছে, তাতে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে অধিকাংশ সড়ক ব্যবহার করা যাবে।

এদিকে বন্যার পানিতে অন্তত ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। ৩ হাজার ৪০৯টি পুকুরের সব মাছ ভেসে গেছে। ফলে ৩ হাজার ১৭৭ জন খামারের মালিক দিশাহারা হয়ে পড়ছেন। অনেকেই ধার-দেনা করে মাছ চাষ করছিলেন।

কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নের ঘনিচা গ্রামের মৎস্য চাষি নয়ন নাগ ও বন্ধন নাগ জানান, তাঁরা তিন ভাই ধার-দেনা করে বাড়ির সামনে মাছের প্রকল্পে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। এ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁদের। কিন্তু বন্যা সেই স্বপ্ন ফিকে করে দিয়েছে। গত রোববার পানি বেড়ে তাঁদের প্রকল্পের সব মাছ ভেসে গেছে। ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়ে দিশাহারা বোধ করছেন তাঁরা। তাঁদের মতো এমন অসংখ্য মৎস্য চাষি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ করে এখন দিশাহারা।

মৎস্য সম্পদের এই ক্ষতি প্রসঙ্গে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফজলুল কাদির বলেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বন্যায় মাছের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ৩ হাজার ৪০৯টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ৮৮৯ দশমিক ৯৪ টন মাছের ক্ষতি হয়েছে, যার বাজারমূল্য ৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। এ ছাড়া পোনা ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় এ পর্যন্ত ১৬৫ মেট্রিক টন চাল, তিন হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও সাড়ে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলায় ৪০০ মেট্রিক টন জিআর, আট লাখ টাকা, শিশুখাদ্য কেনার জন্য দুই লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য দুই লাখ টাকা এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।