পাবনায় নমুনা পরীক্ষায় বিড়ম্বনা, বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি

পাবনা জেলায় পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন) ল্যাব না থাকায় করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষায় বিড়ম্বনা তৈরি হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাবে নুমনা জটের কারণে পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হচ্ছে। টানা ১০ দিন পর গত মঙ্গলবার রাতে সর্বশেষ ১৫ জনের করোনা শনাক্তের মধ্য দিয়ে জেলায় কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬১৪।

নমুনা পরীক্ষার এই জটিলতায় জেলায় কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি চরমভাবে বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় চিকিৎসক ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্রুত জেলায় একটি নিজস্ব পিসিআর ল্যাব স্থাপনের দাবি তুলেছেন তাঁরা। এই দাবির সঙ্গে একাত্ব প্রকাশ করেছেন জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও জেলা সিভিল সার্জন মেহেদী ইকবাল। করোনা প্রতিরোধে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার বিকল্প নেই বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, পাবনায় কোনো পিসিআর ল্যাব না থাকায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু ল্যাবটিতে রাজশাহী মহানগরসহ চারটি জেলার নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নুমনার জটে পরীক্ষার ফল পেতে বেশ দেরি হচ্ছে। অনেক সময় ৮ থেকে ১০ দিনেও নমুনা পরীক্ষার ফল মিলছে না। ৫ জুলাই রাজশাহী ল্যাব থেকে সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষার ফল পাওয়া গেছে। এরপর আর কোনো ফলাফল আসেনি। এর মধ্যে ৭ জুলাই জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে কিছু নমুনা পরীক্ষা করেছে।

সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহী পিসিআর ল্যাবে জেলার ৬ হাজার ৮১৯টি নমুনা জমা দিয়ে ৬ হাজার ৪২৯টি নমুনার ফল পাওয়া গেছে। এ থেকে জেলায় ২১৫ জন এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করতে আসা ৮৪ শ্রমিকসহ ৫৯৯ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপর দীর্ঘ ১০ দিন পর মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী পিসিআর ল্যাবে নতুন ১৫ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়ে জেলায় মোট শনাক্তের সংখ্যা ৬১৪। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০৮ জন। আর মারা গেছেন নয়জন। শনাক্ত বিবেচনায় জেলা সদর ও সুজানগর উপজেলাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। মোট শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে জুন ও জুলাই মাসের মোট ৪৫ দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ৫৭৮ জন।

আগের হিসাব অনুযায়ী, সংক্রমণের হার ঊর্ধগতিতে থাকলেও শুধুমাত্র জেলায় পিসিআর ল্যাব না থাকায় গত ১০ দিনে নতুন শনাক্তের হার কমে গেছে। এতে করে জেলায় করোনার সংক্রমণ আরও অনেক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সংক্রমণ প্রতিরোধে জেলায় একটি পিসিআর ল্যাবের দাবিতে মানববন্ধন, সভা, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এরপরও জেলায় একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন হয়নি।

জেলা শহরের অভিজাত বেসরকারি ক্লিনিক শিমলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক সরওয়ার জাহান বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধ করতে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু পাবনাতে কোনো পরীক্ষা হচ্ছে না। এটা দুঃখজনক।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের পরিচালক দেওয়ান মাহবুব বলেন, পিসিআর ল্যাব না থাকায় সংক্রমিত ব্যক্তিরা পরীক্ষার অভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে নতুন সংক্রমণ বাড়ছে। জেলার মানুষ ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে। ফলে একটি পিসিআর ল্যাব এখন জেলাবাসীর প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন মেহেদী ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজস্ব পিসিআর ল্যাব না থাকায় নমুনা পরীক্ষায় জটিলতা হবে, এটাই স্বাভাবিক। আমরা ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার চিঠি দিয়েছি। পাবনা মেডিকেল কলেজ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি পিসিআর ল্যাব হবে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। তবে এখনো সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। রাজশাহী ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় জটিলতার কারণে আমরা বিকল্পভাবে ঢাকা থেকে কিছু নমুনা পরীক্ষা করেছি। প্রতিকূলতা কাটিয়ে জেলাবাসীকে নিরাপদ রাখতে কাজ করে যাচ্ছি।’