সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশে করোনায় ৮৯৫ বাংলাদেশির মৃত্যু

প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স
প্রতীকী ছবি। ছবি: রয়টার্স

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান ও বাহরাইন—এই ৬ দেশে (এসব দেশের জোট জিসিসি বা উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৯৫ জন বাংলাদেশি।

পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওই ৬ দেশে মোট ৩ হাজার ৫০৪ জন করোনায় মারা গেছেন। এসব দেশে করোনার সংক্রমণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ২৫ শতাংশই বাংলাদেশের নাগরিক।

এর মধ্যে শুধু সৌদি আরবেই মারা গেছেন ৬২১ জন। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১৩০ জন, কুয়েতে ৭৫ জন, ওমানে ৩০ জন, কাতারে ২৪ জন ও বাহরাইনে ১৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এসব দেশে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৩ হাজার বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে প্রায় ১৭ হাজার, কাতারে ৬ হাজার, কুয়েতে প্রায় ৫ হাজার, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪ হাজার, ওমানে ৩ হাজার ও বাহরাইনে ১ হাজার বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশে অবস্থান করা প্রবাসী কর্মী, প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং এসব দেশে নিযুক্ত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশের কর্মীরা গাদাগাদি করে ডরমিটরিতে থাকতে বাধ্য হন। এতে সংক্রমণ রোধ করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অগ্রাহ্য করার বিষয়টিও রয়েছে। আবার করোনার কারণে চাকরি হারানো নিয়ে অনিশ্চয়তা তাঁদের মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বল করে তুলেছে।

সৌদি আরবের দাম্মামে বহুজাতিক তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আরামকোতে কাজ করেন কুমিল্লার তরুণ আমির ইসলাম। গত মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পরিচিত একজন দাম্মামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ওই ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হওয়ার কিছুদিন পর চাকরি চলে যায়। এরপর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন লোকটি। দুই সপ্তাহ আগে তিনি মারা গেছেন।

সৌদিপ্রবাসী এই তরুণের মতে, কয়েক লাখ টাকা খরচ করে এসে যখন চাকরি আর বেতনের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়, তখন তা অনেকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গাদাগাদি করে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার বিষয়গুলো যেমন আছে, তেমনি জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তাও অনেককে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত—এই তিন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনায় মারা যাওয়া সবাইকে ওই দেশগুলোতে দাফন করা হচ্ছে।

কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশহুদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মাঝখানে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করায় কাতারে সংক্রমণ বেড়ে যায়। করোনায় মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশের শারীরিক সমস্যাও ছিল। করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের অনেকে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ নানান শারীরিক জটিলতায়ও ভুগছিলেন।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোস্তফা আলী গত মে মাসের শেষে করোনায় আক্রান্ত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তিনি গত সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এখানকার সরকার দেশি-বিদেশিনির্বিশেষে সবার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে থাকে। তাই চিকিৎসা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু থাকার পরিবেশটা অস্বাস্থ্যকর। সবাই লাখ লাখ টাকা খরচ করে এসেছেন। করোনার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে হয়তো অনেকের চাকরি থাকবে না।

ওমান বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এন আমিন বলেন, বাংলাদেশের লোকজনের মৃত্যু আর আক্রান্তের মূল কারণ কিন্তু গাদাগাদি করে ডরমিটরিতে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা আর নানা রকম শারীরিক সমস্যা।

মধ্যপ্রাচ্যের ৬ দেশের বাইরে করোনায় যুক্তরাজ্যে ৩০৫ জন, যুক্তরাষ্ট্রে ২৭২ জন, ইতালিতে ১৪ জন, কানাডায় ৯ জন, সুইডেনে ৮ জন, ফ্রান্সে ৭ জন, স্পেনে ৫ জন এবং ভারত, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন। অর্থাৎ এই ১৪ দেশে ৬২৭ জন বাংলাদেশি করোনায় মারা গেছেন। সব মিলিয়ে বিশ্বের ২০ দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫২২ বাংলাদেশির।