বানের জলে একাকার লাখো মানুষের চোখের জল
নদ–নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে পানিবন্দী লাখো মানুষ।
সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ১৬টি নদ–নদীর পানিই বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দুই দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে দুর্গত মানুষ। দুর্গত মানুষ খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার ও জ্বালানির সংকটে ভুগছে। এদিকে গত দুদিনে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুসহ ৩ জন মারা গেছে।
টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে গাইবান্ধায়ও। জেলার সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ঘাঘট ও করতোয়ার তীরবর্তী গাইবান্ধার চার উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের ১ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। জেলার ৩ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় সোয়া ১ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, গুচ্ছগ্রাম ও উঁচু জায়গায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে কয়েক হাজার পরিবার। অনেকেই নৌকায় ভাসমান জীবন যাপন করছে। বানভাসি মানুষের মধ্যে খাদ্য ও খাওয়ার পানির সংকট চলছে।
নওগাঁর মান্দায় গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে বাড়ছে আত্রাই নদের পানি। আত্রাই ও ফকিরনির উভয় তীরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৫০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে এ দুই নদীর উভয় তীরের সাতটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পাঁচ সহস্রাধিক মানুষ। গতকাল বুধবার ভোরে আত্রাই নদের পানির তোড়ে নাটোরের সিংড়া উপজেলার তেমুখ বাজার ও ভাগনাগরকান্দি এলাকার দুটি স্থানে সিংড়া-তেমুখ সড়ক ধসে গেছে। ধসে যাওয়া স্থান দিয়ে তাজপুর ইউনিয়নের ৭টি গ্রামে পানি ঢুকছে।
যমুনায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর, চৌহালী ও সদর উপজেলার বানভাসি প্রায় পৌনে দুই লাখ মানুষ এখন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
টাঙ্গাইলের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। খাদ্যসহ নানা সংকটে বন্যার্তরা দুবির্ষহ জীবন কাটাচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, দ্বিতীয় দফার বন্যায় সাতটি উপজেলার ৩৯টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। একই সঙ্গে ছয়টি পৌরসভাও বন্যাকবলিত হয়েছে। এসব ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২৭৯টি গ্রামের ৩ লাখ ৬১ হাজার ৯৬৭ জন পানিবন্দী অবস্থায় আছে।
উজান থেকে আসা ঢল এবং কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে মানিকগঞ্জে যমুনা ও পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বাড়ছে। এতে নদীতীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা, বিশেষ করে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হচ্ছে।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান মণ্ডল জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় অধিকাংশ নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধিকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ১ ফুট পানি বৃদ্ধি একটি ভয়ংকর বিপজ্জনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ফরিদপুর সদর ও চরভদ্রাসনের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যায় ১২ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
মাদারীপুরের শিবচরে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। পাউবো ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, নদীর ভাঙন ও বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিবচর উপজেলা।
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে নীলফামারী ও সুনামগঞ্জে। আর সিলেটে সুরমাসহ সীমান্ত নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারা ও লোভা নদীর পানি বাড়ছে।