ঘরেই এখন গরুর হাট, ফেসবুক দেখে বুকিং

করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে চট্টগ্রামে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির দিকে মনোযোগী হয়েছেন খামারিরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পেজ খুলে গরুর ছবি ও ভিডিও আপলোড দিচ্ছেন। দেখে পছন্দ হলে বুকিং দিচ্ছেন ক্রেতারা।

করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি চট্টগ্রামে পশুর হাট স্থাপন না করার সুপারিশের পর অনলাইন বাজারের গুরুত্ব আরও বেড়েছে। তবে অনলাইনে গরু বিক্রি চললেও শেষ পর্যন্ত সব গরু বিক্রি করা যাবে কি না, শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা।

নগরের কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহায় শাহ আমানত অ্যাগ্রো নামের খামারটি গড়ে উঠেছে তিন বছর ধরে। এবার কোরবানি ঈদ সামনে রেখে সেখানে বিভিন্ন জাতের ৭০টি গরু সংগ্রহ ও প্রতিপালন করা হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পুরোপুরি খামার থেকেই গরু বিক্রি চলছে। খামারে ঢোকার সময় স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী হাত–পা জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। 

শাহ আমানত অ্যাগ্রো নামে একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে তাদের। প্রতিটি গরুর ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেজে আপলোড করা আছে। পাশাপাশি গরুর টোকেন নম্বরও দেওয়া হয়। পছন্দ হলে ক্রেতারা খামারে গিয়ে গরু দেখে দরদাম করে কিনে নিচ্ছেন।

শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, খামারটিতে সারি সারি গরু বেঁধে রাখা হয়েছে। দেশাল, ভারতীয়, অস্ট্রেলিয়ান, ব্রাহমাসহ বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। তিন–চারজন কর্মী গরুকে খাবার দেওয়া ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করে চলেছেন। এক সারিতে ‘বিক্রীত’ লেখা একটা সাইনবোর্ড দেওয়া রয়েছে। ওই সারিতে রয়েছে ১০টি গরু।

খামারের মালিক আকতার হোসেন বলেন, এই গরুগুলো বিক্রি হয়ে গেছে। কেউ পুরো টাকা, কেউবা অগ্রিম টাকা দিয়ে রেখেছেন। সব মিলিয়ে ২০টির মতো গরু বিক্রি হয়েছে। অনলাইনে দেখার পর সরাসরি খামারে এসে গরু দেখে দরদাম করছেন। ঈদের আগে যেকোনো সময় গরু এখান থেকে নিয়ে যাবেন। করোনার কারণে এই পদ্ধতিতে গরু কিনতে অনেকে আসছেন। এই খামারে ৭০ হাজার থেকে ১৭ লাখ টাকা দামের গরু রয়েছে বলে উদ্যোক্তারা জানান।

আকতার হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে এবার কোরবানি কম হবে। তাই সব গরু শেষ পর্যন্ত বিক্রি হবে কি না ভাবছি। না হলে রেখে দিতে হবে।’ 

বোয়ালখালীর ব্যবসায়ী রুস্তম আলী গত বছর বাজার থেকে গরু কিনেছিলেন। এবার কয়েক দিন আগে এই খামার থেকে দুটি গরু কিনেছেন ৩ লাখ ৯৫ হাজার টাকায়। গরু দুটি খামারেই রয়েছে। কিছু টাকা অগ্রিম দিয়েছেন। সেদিন স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে আসেন গরু দেখতে। 

রুস্তম আলী বলেন, ‘ঈদের আগে এখান থেকে নিয়ে যাব। বাড়িতে রাখার সমস্যা। বাজারে যাওয়া ঝামেলা। ঝুঁকি বেশি।’

এস এম জাকারিয়া নামের আরও একজন ক্রেতা তখন গরু দেখতে খামারে আসেন। করোনা পরিস্থিতিতে খামার থেকে পছন্দ করে গরু নিতে চাইছেন তিনিও।

নগরের উত্তর কাট্টলীতে চাঁটগাইয়া অ্যাগ্রো নামের আরেকটি খামারও অনলাইনে গরু বিক্রি করছে। এর মধ্যে চারটি গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানান মালিক রিফাত মো. ইকবাল। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে ২০টি গরু ছিল। এখন মোট ৮৫টি গরু তুলেছি। চারটি বিক্রি হয়ে গেছে। প্রতিদিনই ফেসবুক পেজ দেখে ক্রেতা আসছেন। সব গরু খামার থেকে বিক্রি করার ইচ্ছা আছে।’

একইভাবে নাহার অ্যাগ্রো, এশিয়ান অ্যাগ্রো অনলাইনে গরু বিক্রি করছে। দুটি প্রতিষ্ঠানই ফেসবুক পেজে তাদের গরুর ছবি ও ভিডিও দিয়েছে। এশিয়ান অ্যাগ্রোর পরিচালক ওয়াসিফ আহমেদ সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনায় ঝুঁকি এড়াতে অনলাইনে গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছি। কিছু কিছু সাড়া পাচ্ছি।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রেয়াজুল হকের ভাষ্য, জেলায় ছোট–বড় মিলিয়ে প্রায় আট হাজার খামার রয়েছে। এর মধ্যে নগরে রয়েছে ২৬৭টি। দুটি গরু নিয়ে গড়া খামারও এর অন্তর্ভুক্ত। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে ১ হাজার ১৩১টি গরু বেচাকেনা হয় বলে দাবি তাঁর।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় রেখে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর হাট স্থাপন না করার সুপারিশ করেছে করোনার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। অনলাইনে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করতে বলেছে তারা। 

সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি প্রথম আলোকে বলেন, পশুর হাটের কারণে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই অনলাইনে পশু বেচাকেনা উৎসাহিত করা হচ্ছে।