গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ঝুঁকিতে বাঁধ

বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। নষ্ট হয়েছে গো-খাদ্য ধানের খড়। তাই গো-খাদ্য সংগ্রহ করে আনছেন আবদুল জলিল। ভাষারপাড়া গ্রাম, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা, ১৬ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো।
বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। নষ্ট হয়েছে গো-খাদ্য ধানের খড়। তাই গো-খাদ্য সংগ্রহ করে আনছেন আবদুল জলিল। ভাষারপাড়া গ্রাম, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা, ১৬ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো।

গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। জেলার সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা, ঘাঘট ও করতোয়া নদী তীরবর্তী গাইবান্ধার ৪টি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের ১ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তারা ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার এবং তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আজ সকালে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে প্রতিটি নদ-নদীর পানিই বেড়েছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, তাতে বড় বন্যা হতে পারে।

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, শিশুখাদ্য, গো-খাদ্য, নারীদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসামগ্রী ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়িতে বন্যার পানি ওঠায় পানিবন্দী পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটের। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

আজ সকালে গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এ কে এম ইদ্রিশ আলী প্রথম আলোকে বলেন, বন্যাকবলিত জেলার ৪ উপজেলার জন্য ৩২০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ লাখ টাকা, ৪ লাখ টাকার শিশুখাদ্য, ২ লাখ টাকার গো-খাদ্য ও ৩ হাজার ৬০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়েছে। এগুলোর বিতরণ চলমান রয়েছে।

ঝুঁকিতে বাঁধ
গতকাল বুধবার ভোরে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের ভাষারপাড়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুঁইয়ে পানি অপর পাড়ে যাওয়ায় বাঁধে গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে বাঁধের পশ্চিম পাশে বসবাসকারী ৩০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দিগ্‌বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেককে শুকনো খাবার ক্রয় ও আসবাব রক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ক্রয়ে স্থানীয় দোকানগুলোতে ভিড় করতে দেখা যায়।

খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পাউবো, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয় জনসাধারণ সম্মিলিতভাবে বাঁধ রক্ষার কাজে নেমে পড়েন। জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিনের উপস্থিতিতে দিনভর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাঁধটি তাৎক্ষণিক ভাঙন থেকে রক্ষা করা হয়। কিন্তু এখনো ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। আজ বৃহস্পতিবারও এই বাঁধটি মেরামতের কাজ চলছিল। এ ছাড়া গাইবান্ধা সদরের খোলাহাটি ইউনিয়নের কিশামত বালুয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ায় তা ভাঙনের ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অপর দিকে ফুলছড়ির মাঝিপাড়া এলাকায় ও গাইবান্ধা সদরের তালতলার বিপরীতেও বাঁধ চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেলে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ অংশে ভাঙনের আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নদী তীরবর্তী সর্বসাধারণকে সতর্ক করতে জেলা প্রশাসনসহ সব সরকারি দপ্তরে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে। জরুরি বার্তায় পর্যাপ্ত শুকনা খাদ্য মজুত রাখা, বন্যায় আক্রান্ত লোকদের জরুরি চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা, বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমের ব্যবস্থা গ্রহণ করা ও জরুরি ভিত্তিতে মাছ ধরে বিক্রি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বার্তায় পাউবো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভেতরে যেসব স্থান বন্যামুক্ত রয়েছে সেসব স্থানের জনগণকে সতর্ক করে তাদের জানমালের আগাম নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছে।