ভৈরবে করোনার সংক্রমণ দিনে ১-এর নিচে, স্বস্তি-অস্বস্তি

ছবি রয়টার্স
ছবি রয়টার্স

জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। মাসের প্রথম ১৪ দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ১১ জন। দিনে এই হার এক–এর নিচে নেমে দাঁড়ায় দশমিক ৭৮ শতাংশে। অথচ জুন মাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৩৯৩ জন। মারা যান নয়জন। আগের মাসে দিনে সংক্রমিতের হার ছিল ১৩ জন। আশাজাগানিয়া পরিবর্তন এসেছে সুস্থতার পরিসংখ্যানেও। এখন আক্রান্তের ৮৯ শতাংশ মানুষ সুস্থতা ফিরে পেয়েছেন। 

আজ বৃহস্পতিবার করোনা প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

এদিকে সংক্রমণ ১৩ জনের বিপরীতে এখন এক–এর নিচে নেমে আসায় স্বাস্থ্য বিভাগ স্বস্তি প্রকাশ করেছে। হঠাৎ বিপরীত চিত্রে স্বস্তি এনে দিলেও ব্যবস্থাপনায় কোথাও ভুল হচ্ছে কি না, এমন আলোচনা আছে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে। ইতিবাচক পরিবর্তনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বস্তি এবং সন্দেহ, উভয় দিক উঠে আসছে। বিশেষ করে হঠাৎ করে নমুনা সংগ্রহের মাত্রা কমে যাওয়ায় ভিন্ন আলোচনার জন্ম দেয়।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, কিশোরগঞ্জ করোনার হটস্পট (অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ) ঘোষিত জেলা। আক্রান্ত, মৃত্যু, পরীক্ষা ও সুস্থতা, চার দিক দিয়েই জেলায় ভৈরব এগিয়ে। এই উপজেলায় মোট আক্রান্ত ৫৩৫ জন। মারা গেছেন ১৩ জন। তবে জুলাই মাসের প্রথম দিনটির শুরু হয় সংক্রমণমুক্ত থেকে। পরে একই চিত্রের দেখা পাওয়া যায় আরও চার দিন।

৫৩৫ জন আক্রান্তের ফলাফল আসে ২ হাজার ৮৩০ জনের নমুনা পরীক্ষা থেকে। জুন মাসে দিনে গড় নমুনা সংগ্রহ ছিল ৬০টি। চলতি মাসের প্রথম ১৪ দিনে আক্রান্ত এবং নমুনা দেওয়া দুই কমেছে। হিসাব করে দেখা গেছে, প্রথম ১৪ দিনে নমুনা সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২২৯ জনের। জুনে যেখানে দিনে ৬০ জনের নমুনা সংগ্রহ হয়, জুলাইয়ে এসে কমে দাঁড়ায় ১৬ জনে। ফলে সংক্রমণ কমে আসার বিপরীতে যাঁরা নমুনা সংগ্রহের তুলনাটি করছেন, তাঁদের ভাবনায় স্বস্তির চেয়ে অস্বস্তি বেশি কাজ করছে। অনেকের ধারণা, নমুনা কমে যাওয়ায় কোথাও বড় ধরনের সমস্যা থাকতে পারে। না হলে দ্রুত নমুনা দেওয়ার মাত্রা এতটা নিচে নেমে আসত না। সেই ক্ষেত্রে জুলাই মাস থেকে পরীক্ষায় ফি যুক্ত করাকেও দায়ী করা হচ্ছে। লোকজনের মধ্য থেকে দিন দিন করোনা ভীতি কমে যাওয়া, চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাওয়া এবং বঞ্চনামুক্ত সমাজ কাঠামো গড়ে না ওঠাও কারণ মনে করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ আলী পৌর শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। শুরু থেকেই ওই ওয়ার্ডের করোনা পরিস্থিতি নাজুক ছিল।
মোহাম্মদ আলী বলেন, খাতা–কলমে যতটা ভালো দেখা যাচ্ছে, সামাজিক চিত্র এতটা ভালো বলে মনে হয় না। লোকজন করোনাকে পাত্তা দিচ্ছে না বলেই সংক্রমণ শূন্য দেখাচ্ছে।

কেন এমনটা হচ্ছে, এমন প্রশ্নে ওই জনপ্রতিনিধি বলেন, সমাজের প্রতিটি মানুষ এখন একজন করোনা ডাক্তার। আর যাঁরা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন, তাঁরা তো করোনা বিশেষজ্ঞ। আবার হাসপাতালে গেলে চিকিৎসার চেয়ে অবহেলার মাত্রা বেশি, এমন ধারণাও স্পষ্ট। আক্রান্তের বেশির ভাগের ঠিকানা ঘর এবং চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নিজের মতো করে। এই অবস্থায় উপসর্গ এলে নীরব থেকে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়াটাকে ভালো মনে করছেন লোকজন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, নমুনা দেওয়া কমে যাওয়া ভাবনায় ফেললেও এই কথা ঠিক পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। বর্তমান চিত্রটি ধরে রাখতে তিনি পশুর হাটের শৃঙ্খলার ওপর গুরুত্ব দেন। কোনো ব্যক্তির একটি উপসর্গ এলে তাঁকে যেন নমুনার জন্য সংগ্রহ কেন্দ্রে পাঠানো হয়, জনপ্রতিনিধিদের প্রতি এই অনুরোধ রাখেন বুলবুল আহমেদ।