নওগাঁয় আত্রাই নদের ছয় স্থানে বাঁধ ভেঙে ২২ গ্রাম প্লাবিত

নওগাঁর মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ছয়টি স্থানে আত্রাই নদের মূল বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বাঁধের ভাঙন স্থানের ছবিটি আজ সকালে আত্রাই উপজেলার আহসনগঞ্জ থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো।
নওগাঁর মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ছয়টি স্থানে আত্রাই নদের মূল বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বাঁধের ভাঙন স্থানের ছবিটি আজ সকালে আত্রাই উপজেলার আহসনগঞ্জ থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো।

নওগাঁর মান্দা ও আত্রাই উপজেলায় নতুন করে আরও ছয়টি স্থানে আত্রাই নদের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। বাঁধভাঙা পানিতে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া ফসলি জমি তলিয়ে গেছে এবং মৎস্যচাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 

গতকাল বুধবার রাতে মান্দা উপজেলার জোকাহাট, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি ও পার নুরুল্যাবাদ এলাকায় আত্রাই নদের দক্ষিণ পাড়ের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ (মান্দা ও আত্রাই সড়ক) ভেঙে যায়। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার সকালে আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ হাট ও বৈঠাখালি এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়।


স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে গত সোমবার থেকে নওগাঁর বিভিন্ন পয়েন্টে আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। গত মঙ্গলবার ও গতকাল বুধবার মান্দা উপজেলার সাতটি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গতকাল রাতে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর, জোকাহাট, কশব ইউনিয়নের কয়লাবাড়ি ও নুরুল্যাবাদ ইউনিয়নের পার নুরুল্যাবাদ এলাকায় মূল বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। এতে মান্দা উপজেলার কশব, বিষ্ণুপুর, নুরুল্যাবাদ ও কালিকাপুর ইউনিয়নের অন্তত ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
এ ছাড়া আজ সকালে আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের আহসানগঞ্জ হাট ও বিশা ইউনিয়নের বৈঠাখালি এলাকায় আত্রাইয়ের বাঁধ ভেঙে উপজেলার হাটকালুপাড়া ইউনিয়নের অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রায় ছয়টি ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

মান্দার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকরামপুর গ্রামের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান, পলাশ বর্মণসহ ১০-১২ জন জানান, গত মঙ্গলবার থেকে চকরামপুর এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। ওই দিন থেকেই এলাকাবাসী বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা হলো না। পানির চাপে গতকাল রাত ৮টার দিকে বাঁধের ৫০ মিটার অংশ পানির ভেঙে যায়। মুহূর্তের মধ্যে গ্রামের ভেতর পানি ঢুকে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নওগাঁ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ার্দার মো. আসাদুল্লাহ জানান, নওগাঁর মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ছয়টি স্থানে আত্রাই নদের দক্ষিণ অংশে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। আজ সকাল ১০টায় নওগাঁর জোতবাজার পয়েন্টে আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে ছোট যমুনার পানি বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের আশ্রয়ের জন্য ইতিমধ্যে দুটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। উপজেলার দাশপাড়া ডিগ্রি কলেজ ও চককামদেবপ উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। ত্রাণসহায়তা দেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যাঁরা আশ্রয়কেন্দ্র এবং বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ কিংবা বিভিন্ন উঁচু রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন, তাঁদের আজ থেকেই ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক রবীআহ নূর আহমেদ জানান, বন্যার পানিতে গতকাল বুধবার পর্যন্ত নওগাঁর মান্দা, আত্রাই ও রানীনগর উপজেলার ২ হাজার ৪০৯ হেক্টর জমির ফসলের মাঠ নিমজ্জিত হয়েছে। তবে নতুন করে ছয়টি স্থানে ভাঙনের ফলে তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরির কাজ চলছে।