কোভিড পরীক্ষা না করিয়েই টাকার বিনিময়ে দিচ্ছিল প্রতিবেদন

ছবি প্রথম আলো
ছবি প্রথম আলো

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে রূপপুর মেডিকেয়ার নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিক অনুমোদন ছাড়াই করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা সংগ্রহ করে আসছিল। এরপর সেসব নমুনা পরীক্ষা না করেই দিত প্রতিবেদন। আর এই পরীক্ষার নামে একেকজনের কাছ থেকে নেওয়া হতো ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা।

এসব অভিযোগে ক্লিনিকটিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযান চালিয়ে সত্যতা পায়। পরে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ক্লিনিকের মালিক ও ব্যবস্থাপককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
৮ জুলাই প্রতারণার অভিযোগে ঈশ্বরদী থানা-পুলিশ ক্লিনিকের মালিক আবদুল ওহাব ও ম্যানেজার রুহুল আমিনকে আসামি করে মামলা করে। পরে মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ক্লিনিকটিতে অভিযান পরিচালনা করেন ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসমা খান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম।
অভিযান দলের সদস্য ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রূপপুরে দেশের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পে প্রতিদিন কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এখন নিয়ম অনুযায়ী নতুন শ্রমিক কাজে এলে তাঁরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত কি না, তা জানতে পরীক্ষা করাতে হয়। এই সুযোগ রূপপুর মেডিকেয়ার নামের ওই ক্লিনিকটি অনুমোদন ছাড়াই করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষার নামে প্রতারণা শুরু করে। নমুনা সংগ্রহের জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে একটি পরিত্যক্ত ইটভাটায় তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে। প্রকল্পের শ্রমিকেরাসহ আশপাশের লোকজন কিছু না বুঝেই সেখানে নমুনা দিতে শুরু করেন। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ-পজিটিভ প্রতিবেদন দিতে থাকে।
অভিযান দলের প্রধান আসমা খান জানান, ক্লিনিকটি অনুমোদন ছাড়াই করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়াসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ক্লিনিকটিতে অভিযান চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে অভিযোগের সত্যতা মেলায় ক্লিনিকটি সিলগালা করা হয়েছে।
পাকশী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) বিকাশ চক্রবর্তী জানান, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছিল। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ জুলাই ক্লিনিকের মালিক আবদুল ওহাবকে আটক করা হয়। পরে তিনিসহ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনকে আসামি করে ৮ জুলাই মামলা করা হয়েছে। এর পরও ক্লিনিকটি প্রতারণা করে যাচ্ছিল। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় একই মামলায় ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
জেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব ও সিভিল সার্জন মেহেদী ইকবাল বলেন, অনুমোদন ছাড়া করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও প্রতিবেদন দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। ক্লিনিকটি আইন অমান্য করে এই প্রতারণা করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।