বাঁধের পশ্চিম প্রান্ত ডুবে যাওয়ায় পূর্ব প্রান্তে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ

যমুনার তীরবর্তী নলীন-পিংনা-যোকারচর বাঁধের পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বাঁধের ২৬টি স্থানে গর্ত হয়ে পানি চোয়ানো শুরু হয়েছে। বালুর বস্তা ফেলে গর্ত বন্ধের চেষ্টা। ছবি: প্রথম আলো
যমুনার তীরবর্তী নলীন-পিংনা-যোকারচর বাঁধের পশ্চিম প্রান্তের গ্রামগুলো বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বাঁধের ২৬টি স্থানে গর্ত হয়ে পানি চোয়ানো শুরু হয়েছে। বালুর বস্তা ফেলে গর্ত বন্ধের চেষ্টা। ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের ডিগ্রিরচর গ্রামের আনছার আলীর বাড়িঘর তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। পরিবার নিয়ে তিনি আশ্রয় নিয়েছেন নলীন-পিংনা-যোকারচর বাঁধের পূর্ব প্রান্তে অর্জুনা দাখিল মাদ্রাসার একটি কক্ষে। তাঁর মতো আরও কয়েকটি পরিবার সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।

আনছার আলী বলেন, ‘বাঁধের এই পাড় (পূর্ব পাড়) শুকনা আছে। তাই এহনো থাকবার পারতাছি। বাঁধ ভাইঙ্গা গেলে আমাগো আর কোনো উপায় থাকব না।’

যমুনা নদীর তীরে জামালপুরের পিংনা থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার যোকারচর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার ‘নলীন-পিংনা-যোকারচর বাঁধ’। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার নলীন থেকে ভূঞাপুর উপজেলা সদর পর্যন্ত এ বাঁধের পশ্চিম প্রান্তের প্রতিটি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তাই সেসব গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন বাঁধটির পূর্ব প্রান্তে। তবে এ বাঁধেরও বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট গর্ত হয়ে পানি চুইয়ে পড়ছে। বাঁধ রক্ষার জন্য কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয়রা।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, অর্জুনা মাদ্রাসায় বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মিলন পাটনি। মিলনের বৃদ্ধা মা বকুল পাটনি বলেন, ‘প্রত্যেকবার পানি বাড়ে আর আমাগো ঘর ছাইরা আশ্রয় নেওন লাগে এহানে সেহানে। এইডাই আমাগো নিয়তি।’

স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীরবর্তী নলীন, জগৎপুরা, গুলিপেঁচা, অর্জুনা, চুকাইনগর, কুঠিবয়ড়া, গাড়াবাড়ি, তড়াই, বলরামপুর, পলসিয়া, টেপিবাড়ি, রায়েরবাসালিয়া গ্রামগুলোর যে অংশ নলীন-পিংনা-যোকারচর বাঁধের পশ্চিমে পড়েছে, তা সব বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। তবে এখনো গ্রামগুলোর বাঁধের পূর্ব প্রান্তের অংশ নিরাপদে রয়েছে। বাঁধ ভেঙে গেলে যেকোনো সময় পূর্ব প্রান্তের অংশও বন্যাকবলিত হয়ে পড়বে।

অর্জুনা গ্রামের আবদুস সাত্তার জানান, এই বাঁধ মূলত এই এলাকা ছাড়াও ঘাটাইল, গোপালপুর ও কালিহাতী উপজেলাকে বন্যামুক্ত রাখতে বড় ভূমিকা রাখে।

বাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গাড়াবাড়ি, অর্জুনা, কুঠিরবয়ড়া, টেপিবাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে বাঁধের মধ্যে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়ে পানি চুইতে শুরু করেছে। পাউবো ও স্থানীয় লোকজন বাঁধটি রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ফেলে গর্ত বন্ধ করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি ঢুকে বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। গত বছর ৫২টি স্থানে এ ধরনের গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। একপর্যায়ে টেপিবাড়ি এলাকায় বাঁধ ধসে যায়। এবার বাঁধটি রক্ষার জন্য আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে বালুর বস্তা মজুত রাখা হয়েছিল। যেখানে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে, সেখানেই বস্তা ফেলে মেরামত করা হচ্ছে।

টাঙ্গাইল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার ২৬টি স্থানে ইঁদুরের গর্ত দিয়ে পানি চুইতে শুরু করেছে। এগুলো রোধ করতে কাজ করা হচ্ছে।