রিজেন্টকে দামি যন্ত্রপাতি দিয়েছিল সরকারই, এখন খোঁজ পড়েছে

রিজেন্ট হাসাপাতাল। ফাইল ছবি
রিজেন্ট হাসাপাতাল। ফাইল ছবি

সরকারি হাসপাতালের জন্য কেনা প্রয়োজনীয় ও ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি গিয়েছিল রিজেন্ট হাসপাতালে। এখন সেগুলোর খোঁজ পড়েছে। যন্ত্রপাতিগুলো ফিরিয়ে আনতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপো (সিএমএসডি) বা কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। স্বাস্থ্যের যাবতীয় কেনাকাটা করার দায়িত্ব সিএমএসডির।

সরকারের সঙ্গে করা চুক্তিকে পাত্তা না দিয়ে টাকার বিনিময়ে নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসা দেওয়া এবং নমুনা নিয়ে ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগে র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরার দুটি শাখা বন্ধ করে দেয়। র‌্যাব আরও জানায়, রিজেন্টের উত্তরা শাখার লাইসেন্স ছিল রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের। সেটিকে তারা শুধু হাসপাতাল হিসেবেই দেখায়নি, লাইসেন্সও নবায়ন করেনি। তারপরও কার নির্দেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্টের সঙ্গে চুক্তি করল, তা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই জানা গেল, রিজেন্টকে সরকারি হাসপাতালের জন্য কেনা যন্ত্রপাতিও বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়েছিল।

যে চারটি যন্ত্রের খোঁজ করা হচ্ছে, সেগুলো হলো, দুটি ডায়ালাইসিস মেশিন, একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ডিস্টিলড, দুটি আইসিইউ ভেন্টিলেটর এবং দুটি ডায়ালাইসিস বেড বেন্ড। মেডিকেল যন্ত্রাংশ আমদানি করে থাকে, এমন একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর যন্ত্রপাতিগুলোর যে দাম ধরা হয়েছে, সে অনুযায়ী ডায়ালাইসিস মেশিন দুটির দাম পড়ার কথা ৫৪ লাখ টাকা, ভেন্টিলেটর দুটির দাম ৩৬ লাখ ও দুটি ডায়ালাইসিস বেডের দাম পড়ার কথা প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা। তবে ওই সূত্রটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের দাম নিশ্চিত করতে পারেনি।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে লেখা চিঠিতে সিএমএসডির পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামান লিখেছেন, গত ৭ মে সিএমএসডির সাবেক প্রশাসন রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডকে চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এখন হাসপাতাল দুটি বন্ধ আছে। দীর্ঘদিন এ অবস্থায় থাকলে মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। তা ছাড়া সরকারি টাকায় কেনা সরকারি মালামাল একটি অবৈধ প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়িক স্বার্থে ব্যবহার কোনোভাবেই সমীচীন ও গ্রহণযোগ্য নয়।

চিঠিতে সিএমএসডি পরিচালক আরও লিখেছেন, জরুরি ভিত্তিতে মালামাল সিএমএসডিতে ফেরত আনা দরকার। ফেরত আনা গেলে প্রয়োজনে কোভিড–১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত সরকারি অন্যান্য হাসপাতালে সরবরাহ করা যেতে পারে।

এই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালকের কাছে। চিঠির কোনায় লেখা আছে ‘আরজেন্ট’।

অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার উপপরিচালক ইউনুস আলী প্রথম আলোকে বলেন, রিজেন্টকে কোনো যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে কি না, তাঁর জানা নেই। তবে সরকার রোগীর স্বার্থ বিবেচনায় চুক্তি করে দিতে পারে।

বিনা মূল্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহের কথা ছিল না

গত ২১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও রিজেন্ট হাসপাতালের মধ্যে চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তিতে বিনা মূল্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহের কথা বলা হয়নি। বরং রিজেন্টের হাসপাতাল কতটা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং তাদের উদ্দেশ্য ‘কত মহৎ’, তার উল্লেখ ছিল চুক্তিতে।

চুক্তিতে রিজেন্ট হাসপাতালের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে, বাংলাদেশের বিশৃঙ্খল স্বাস্থ্যব্যবস্থায় রিজেন্ট মহৎ উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে, যার মূলবাণী ‘সেবা সব সময়’। হাসপাতাল দুটোয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সাধারণ চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকস, অত্যাধুনিক বায়োমেডিকেল যন্ত্রপাতি আছে। আছে সব ধরনের সেবাব্যবস্থা, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও অপারেশন থিয়েটার ।

চুক্তি অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত নজরদারি, সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য, চিকিৎসা প্রটোকল দেওয়া, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র ও ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার জন্য জনবল, রিজেন্টের কার্যক্রম ও সেবা সম্পর্কে গণমাধ্যমে জানানোর কথা ছিল।

এদিকে র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে তাঁরা রিজেন্টের সিলগালা করা দুটি হাসপাতাল খুলে যন্ত্রপাতিগুলো বের করে নেবেন। কিন্তু অভিযানের সময় ডায়ালাইসিস মেশিন তাঁদের চোখে পড়েনি।

ডায়ালাইসিস মেশিন না থাকায় রিজেন্টের মালিক মো. সাহেদ ওরফে সাহেদ করিম তাঁর বাবা সিরাজুল করিমকে মহাখালীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। র‌্যাবের দায়িত্বশীল সূত্রের ধারণা, সাহেদ করিম ডায়ালাইসিস মেশিন দুটি বেচে দিয়েছেন।