দেশে করোনায় মৃত ৫৬ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের কম

>ইতালিতে ৯৫, যুক্তরাষ্ট্রে ৮০, ভারতে ৫৩ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি

গত ডিসেম্বরে দেশে আসেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এক তরুণী। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাঁর জ্বর আসে। কিছুদিন পর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। নমুনা পরীক্ষায় তাঁর করোনা শনাক্ত হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুই দিন পর ২১ মে মারা যান তিনি।

পুরান ঢাকার ৫৫ বছর বয়সী ব্যবসায়ী আতাউর রহমানের রক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল। গত জুনে জ্বর ও শ্বাসকষ্টের পর তাঁর ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে। বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। পরে তাঁর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার ফল আসার দেড় ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান তিনি।

ওই দুজনের মতো ৬০ বছরের কম বয়সী এমন অনেকেই দেশে মারা যাচ্ছেন। দেশে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ৪৪ শতাংশেরবয়স ৬০ বছরের বেশি। ৫১ শতাংশের বয়স ৩১ থেকে ৬০ বছর। আর বাকি ৫ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের কম।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ইউরোপ ও আমেরিকায়। অথচ সেখানকার চিত্র বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। পাশের দেশ ভারতেও একই অবস্থা। বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টা বলছে, ইতালিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতদের মধ্যে ৯৫ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। আর সুইডেনে ৯৬ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর কন্ট্রোল ডিজিজ অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টার (সিডিসি) বলছে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। আর ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে ৬০ বছরের বেশি বয়সীরা মারা গেছেন ৫৩ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মৃত ব্যক্তির বয়স ও লৈঙ্গিক পরিচয় দিলেও মৃত্যুর কারণ, উপসর্গ বা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করে না। সব তথ্য বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি।

জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখানে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার চর্চা নেই। তাই অনেকেই নিজের রোগ সম্পর্কে জানেন না। করোনায় মৃতের ক্ষেত্রে রোগীর অন্য রোগেরও ভূমিকা আছে। কয়েকটি শিশুও মারা গেছে দেশে, যাদের অসংক্রামক ব্যাধি ছিল।

তেজগাঁওয়ের ৪৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি কক্সবাজারে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করতেন। জুনের শুরুতে জ্বর আসে তাঁর। এক
সপ্তাহ পর ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসেন। নমুনা পরীক্ষা করে করোনা শনাক্ত হয় তাঁর। একপর্যায়ে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অ্যাম্বুলেন্স আসার আগেই মারা যান তিনি। অন্য কোনো রোগ ছিল কি না, জানে না পরিবার।

গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ হাজার ৪৯৬ জন। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশ পুরুষ ও ২১ শতাংশ নারী। অন্য দেশের তুলনায় দেশে নারীর মৃত্যুর হার কম। এমনকি বিভিন্ন দেশের তুলনায় করোনায় মৃত্যুহারও কম দেশে। বিশ্বে করোনায় গড় মৃত্যুহার ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ইউরোপের কয়েকটি দেশে এটি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তবে দেশে মৃত্যুহার ১ দশমিক ২৭ শতাংশ। ভারতেও এটি ২ শতাংশের বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশে করোনায় মৃতের প্রায় ৪৪ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৩০ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৭ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী ৩ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী ১ শতাংশ। বাকিদের বয়স ১০ বছরের কম।

অসংক্রামক ব্যাধিকে মৃত্যুর বড় কারণ হিসেবে দেখছেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, দেশে ৫০ বছর পার হলেই নানা অসংক্রামক ব্যাধিতে ভুগতে থাকেন অনেকে। তাই ইউরোপ-আমেরিকায় ৭০-৮০ বছর পার হলে যে ঝুঁকি, এখানে ৫০ পার হলেই সেই ঝুঁকি। তিনি বলেন, দেশে কমিউনিটিভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা দরকার।