বগুড়ায় যমুনার পানি আরও বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

বগুড়া
বগুড়া

বগুড়ায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি গত বছরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। গত বছরের ১৮ জুলাই যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। ৩৬৪ দিনের মাথায় আজ শুক্রবার সকাল ৬টায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সারিয়াকান্দি উপজেলার মথুরাপাড়ায় যমুনা নদীর বিপৎসীমা ধরা হয় ১৬ দশমিক ৭০ মিটার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় এখানে পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৭ দশমিক ৯৪ মিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ১২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। আরও ১২ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ছয়টায় পানি প্রবাহিত হয়েছে ১২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে আজ সকাল থেকে ১৭ দশমিক ৯৮ মিটার অর্থাৎ বিপৎসীমার ১২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে পানি কিছুটা কম বৃদ্ধি পেলেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। তবে যমুনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জেলার বাঙ্গালী, ইছামতীসহ অন্য নদনদীর পানিও বাড়ছে। এর ফলে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় পানিবন্দী ৩ উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ৩১ হাজার ৩৪২ পরিবারের ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৭০ জন মানুষ। বসতবাড়ি বুকসমান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হাজারো বানভাসি মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আশ্রয়হীন অনেক মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে, গুচ্ছগ্রামে, উঁচু জায়গায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। প্রবল স্রোতে নদী ভাঙনে বিলীন হচ্ছে তীরবর্তী বিভিন্ন চর। বানভাসি ও নদীভাঙনে বসতহারা কয়েক হাজার পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে, গুচ্ছগ্রামে, আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে। পর্যাপ্ত ত্রাণ নেই, বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই। শৌচাগারের সুবিধা নেই।

বগুড়া জেলা প্রশাসকের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের ১৫০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা ৩১ হাজার ৩৪২। বন্যায় দুর্ভোগে পড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৭০ জন মানুষ। পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে কৃষকের প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমির পাট-ধান,বীজতলাসহ আবাদি ফসল।
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদীর চরাঞ্চলের মানুষ। এই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ১২৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ২৫ হাজার ৭৫০ পরিবারের ১ লাখ ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। যমুনার দুর্গম ৮২টি চর যমুনার ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বানভাসি অনেক মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে, চরের শুকনো জায়গায় খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মণ্ডল জানিয়েছেন, বন্যাদুর্গত লোকজনের মাঝে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪০০ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ টাকা ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।