মানিকগঞ্জে তিন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

নদীভাঙনে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। পাশেই ছিল চরকাটারী বাজার। বাজারের অধিকাংশ বিলীন হয়েছে। এখন বন্যার পানির স্রোতে অবশিষ্ট দোকানঘর ও স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম। বৃহস্পতিবার সকালে চরকাটারী বাজার এলাকায়। ছবি: আবদুল মোমিন
নদীভাঙনে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয় নদীগর্ভে চলে গেছে। পাশেই ছিল চরকাটারী বাজার। বাজারের অধিকাংশ বিলীন হয়েছে। এখন বন্যার পানির স্রোতে অবশিষ্ট দোকানঘর ও স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যাওয়ার উপক্রম। বৃহস্পতিবার সকালে চরকাটারী বাজার এলাকায়। ছবি: আবদুল মোমিন

মানিকগঞ্জে যমুনা ও পদ্মার পানি বেড়েই চলেছে। এতে জেলার দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

এদিকে জেলা সদর, ঘিওর ও সাটুরিয়া উপজেলায় ফসলি জমিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে আউশ, আমন, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মানিকগঞ্জ কার্যালয়ের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) ফারুক আহমেদ বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ১০ জুলাই থেকে দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলায় যমুনা এবং হরিরামপুরে পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। সর্বশেষ শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে শিবালয়ের আরিচা পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার এবং হরিরামপুরে পদ্মার পানি ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হচ্ছিল।

দৌলতপুরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যমুনায় পানি বাড়ার কারণে উপজেলার বাচামারা, চরকাটারী, বাঘুটিয়া ও জিয়নপুর ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী এসব মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এ ছাড়া দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

কোরবানি উপলক্ষে খামারিরা গরু পালন করে থাকেন। এ সময়ে খড়ের চাহিদাও বেড়ে যায়। বিক্রির জন্য নৌকায় করে এই খড় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ইউনিয়নের বরটিয়া এলাকায়। ছবি: আবদুল মোমিন
কোরবানি উপলক্ষে খামারিরা গরু পালন করে থাকেন। এ সময়ে খড়ের চাহিদাও বেড়ে যায়। বিক্রির জন্য নৌকায় করে এই খড় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার সকালে দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ইউনিয়নের বরটিয়া এলাকায়। ছবি: আবদুল মোমিন

এদিকে পানি বাড়ায় হরিরামপুর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার লেছড়াগঞ্জ, আজিমনগর, ধূলশুড়া, হারুকান্দি, বয়ড়া, সূতালড়ি, কাঞ্চনপুর ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবারের বসতভিটায় পানি প্রবেশ করেছে।

দৌলতপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যাকবলিত এসব মানুষ খাবার, জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে। বন্যার পানি থেকে রক্ষায় কোনো কোনো এলাকায় ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বানভাসি মানুষ। পানিতে চারদিক তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, নদীভাঙনে দৌলতপুরের চার-পাঁচটি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে। নতুন করে বন্যার আঘাতে এসব এলাকার মানুষজন চরম অসহায় হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী মানুষের মধ্যে সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল।

বন্যার পানি বসতভিটায় উঠে পড়েছে। আর সামান্য বাড়লেই পানি ঘরে ঢুকে পড়বে। বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার টাঙ্গাইলের নাগরপুর সীমান্তবর্তী এলাকায়। ছবি: আবদুল মোমিন
বন্যার পানি বসতভিটায় উঠে পড়েছে। আর সামান্য বাড়লেই পানি ঘরে ঢুকে পড়বে। বৃহস্পতিবার সকালে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার টাঙ্গাইলের নাগরপুর সীমান্তবর্তী এলাকায়। ছবি: আবদুল মোমিন

এদিকে হরিরামপুর উপজেলা সদরের প্রধান সড়কের পাটগ্রাম অংশ প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে সড়ক ধসে গেছে। এতে উপজেলা সদরে সঙ্গে যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় এ পর্যন্ত ৭৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে জেলার ৭ হাজার ৩০৬ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৬৮৮টি পরিবার মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় ১৩০ মেট্রিক টন চাল এবং ১ হাজার ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা মজুত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, জেলায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্র এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। বানভাসি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, চাল ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রয়েছে।