পানের রপ্তানি বন্ধ, দেশেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার প্রচুর পান হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন পানচাষিরা। ছবি: এজাজ আহম্মেদ
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার প্রচুর পান হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে রপ্তানি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন পানচাষিরা। ছবি: এজাজ আহম্মেদ

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবার প্রচুর পান হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিদেশে পান রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবেও পানের ন্যায্য দাম মিলছে না। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

পানচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য বেশ উপযোগী। এ কারণে কয়েক যুগ ধরে এই অঞ্চলে পানের আবাদ করা হয়। উপজেলার বালিয়াকান্দি, আড়কান্দি, পাটুরিয়া, বেতেঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল, নার্সারি, স্বর্পবেতেঙ্গা, খালকুলা, বহরপুর, যদুপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে পান চাষ হয়। এই অঞ্চলে সাধারণত দুই জাতের পানের আবাদ করা হয়। প্রায় দেড় শ একর জমিতে হয় মিষ্টি পান ও সাচি পান। গাছ রোপণ করার এক বছরের মাথায় পান তোলা যায়। ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে সাত-আট বছর ফলন পাওয়া যায়। পানের মান ভালো হওয়ায় সুনামের সঙ্গে পান বিক্রি করেন এখানকার চাষিরা।

আশপাশের জেলার চাহিদা মিটিয়ে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপে পান রপ্তানি করা হয়। রপ্তানি করে ভালো আয় হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন পান চাষের দিকে। কিন্তু করোনার কারণে পান রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। আবার বাজারেও পানের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। আবার বরজেও একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে পান রাখা যায় না।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বালিয়াকান্দি পানবাজারে পানের আড়ত বসেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রির জন্য চাষিরা পান নিয়ে এসেছেন। বাজারে ক্রেতা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। আগের মতো বাইরের বড় ক্রেতা তেমন একটা নেই। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পান কিনছেন। ছোট আকারের পান এক কুড়ি (তিন হাজার ২০০টি পান, ৮০টি পানে এক বিড়ে আর ৪০ বিড়ে এক কুড়ি) সাধারণত দেড় শ থেকে দুই শ টাকা। আর বড় আকারের পানের কুড়ি এক হাজার দুই শ থেকে এক হাজার চার শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চর আড়কান্দিগ্রামের পানচাষি মামুন শেখ বলেন, ‘প্রায় এক একর জমিতে পানের আবাদ করেছি। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আবাদ খারাপ হয়নি। করোনার কারণে পানের দাম একেবারে কমে গেছে। যে পান এখন বারো শ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তা চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু সাধারণ ক্রেতারা আগের দামেই পান কিনে খাচ্ছেন। আমাদের লোকসান হচ্ছে। কিন্তু মহাজন বা আড়তদারদের লোকসান হয়নি। বরং তাঁরা আগের চেয়ে অনেক বেশি লাভ করছেন।’
মামুন শেখ আরও বলেন, ‘এক বিড়ে পান আমরা ৩০ টাকায় বিক্রি করলেও আড়তদার তা ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। শুধু প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের দাম কমেনি। শুধু পানের দাম কমেছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজর দেওয়া প্রয়োজন। সহজ শর্তে ঋণ বা প্রণোদনা দিলে খুব উপকার হয়। কারণ আমাদের এলাকার পান রপ্তানি করা হয়।’

পাটুরিয়া গ্রামের পানচাষি রামপ্রসাদ দাস বলেন, ‘১৬ শতাংশ জমিতে পানের আবাদ করেছি। আমার আবাদ ভালো হয়নি। ঠিকমতো সার–ওষুধ দিতে না পারায় গাছ মরে যাচ্ছে। বাজারে পানের দাম ভালো না। আগের মতো দেশের বাইরেও যাচ্ছে না। এসব কারণে হাল ছেড়ে দিয়েছি। এতে অন্তত ৬০ হাজার টাকার ক্ষতি হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানকার মিষ্টি পান এলাকার চাহিদা মিটিয়ে আটটি দেশে রপ্তানি করা হয়। পানচাষিদের সব সময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দেন। বেশি বৃষ্টির কারণে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে পান। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পানি শুকিয়ে গেলেই এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। আর আম্পান ও করোনার কারণে এ বছর পানচাষিরা চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক মাস আগে আমি উপজেলায় যোগ দিয়েছি। রাস্তার ধারে বেশ কিছু পানের বরজ দেখেছি। কিন্তু এই অঞ্চলে পানের এত ব্যাপকতার কথা আমার জানা ছিল না। ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সহযোগিতা বা সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’