শরীয়তপুরের তিন উপজেলার ৫০টি গ্রাম প্লাবিত

শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের মুলফৎগঞ্জ এলাকায় খালের মুখের বালুভর্তি জিও ব্যাগ সরে গিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে মুলফৎগঞ্জ বাজারটির দক্ষিণ অংশ ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার সকালে। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ
শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের মুলফৎগঞ্জ এলাকায় খালের মুখের বালুভর্তি জিও ব্যাগ সরে গিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে মুলফৎগঞ্জ বাজারটির দক্ষিণ অংশ ভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুক্রবার সকালে। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে জাজিরার বড়কান্দি ও দুর্গারহাট এলাকায়। গত তিন দিনে ওই এলাকার ১৫০ হেক্টর কৃষিজমি, ৫০০ মিটার পাকা সড়ক ও ১০টি বসতবাড়ি পদ্মায় বিলীন হয়েছে।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়ন্তী রুপা রায় প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ার পদ্মা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থান তলিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। নড়িয়া পৌরসভার ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্তত ৯০টি পরিবারের বসতঘরে পানি প্রবেশ করেছে। মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে। তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শরীয়তপুর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, নড়িয়া ও জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষার কাজ চলছে। নড়িয়ার সুরেশ্বর থেকে জাজিরার বিলাসপুর পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার তীর রক্ষা কাজে ৪৩ লাখ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এখন চলছে সিসি ব্লক ফেলার কাজ। নড়িয়ার মুলফৎগঞ্জ এলাকায় কেদারপুর খালের মুখ থেকে জিও ব্যাগ সরে গিয়ে স্রোতের তোড়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। এতে মুলফৎগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ অংশে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নড়িয়ার কীর্তিনাশার মুখ থেকে বিলাসপুর পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ তলিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। পানিতে বাঁধের বিভিন্ন অংশ তলিয়ে যাওয়ায় জিও ব্যাগসহ মাটি ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মুলফৎগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী লিয়াকত হোসেন বলেন, নদীতে তীব্র স্রোত। স্রোতের সঙ্গে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে তলিয়ে যাওয়া জিও ব্যাগসহ মাটি দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

নড়িয়া পৌরসভার শুভগ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বন্যার পানিতে আমাদের পুরো গ্রাম তলিয়ে গেছে। আমার ঘরে পানি প্রবেশ করায় চরম বিপাকে পড়েছি। গবাদিপশু ও পরিবারের শিশু সদস্যদের নিয়ে দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি।

জাজিরার পাইনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ওহাব মাঝি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাজিরার পাঁচটি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে পাইনপাড়া গ্রামের ৬টি গরু মারা গেছে। আমার দুই শতাধিক হাঁস-মুরগি ভেসে গেছে। এ গ্রামের মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন।’

পাউবোর শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের অধিকাংশ স্থানই পানিতে তলিয়ে গেছে। এটা নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। আর যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।’

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জোয়ারের সময় পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০-১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শরীয়তপুরের নড়িয়ার সুরেশ্বর পয়েন্টে বৃহস্পতিবার রাতে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। নদীতে পানির মোট উচ্চতা ছিল ৪৫৭ সেন্টিমিটার।