খেয়া পারাপারে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়, বিপাকে যাত্রীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সীতারামপুর ঘাট থেকে তিতাস নদ পারাপারের জন্য খেয়ায় উঠেছেন যাত্রীরা। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সীতারামপুর ঘাট থেকে তিতাস নদ পারাপারের জন্য খেয়ায় উঠেছেন যাত্রীরা। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা সদরের মনতলা থেকে সীতারামপুর ঘাট পর্যন্ত খেয়া পারাপারে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের এক নেতার লোকজন জেলা পরিষদের সিদ্ধান্ত না মেনে কয়েক মাস ধরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, কৃষ্ণনগর-গোকর্ণ সড়ক দিয়ে নবীনগর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরে যাতায়াত করেন। জেলা শহরে যাওয়া–আসার জন্য নবীনগর উপজেলার তিতাস নদের মনতলা ঘাট থেকে সীতারামপুর ঘাট পর্যন্ত খেয়া পারাপার করতে হয়। এ ছাড়া উপজেলার বড়াইল, কৃষ্ণনগর ও বীরগাঁও ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ এই ঘাট দিয়ে নবীনগর উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। কিন্তু খেয়াঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিনের লোকজন কয়েক মাস ধরে যাত্রীদের কাছ থেকে ১০ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা করে ভাড়া আদায় করছেন। পাশাপাশি মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য ৪০ টাকা আদায়ের নির্দেশনা থাকলেও ৭০ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নবীনগর উপজেলা সদরের মনতলা নৌঘাটে জেলা পরিষদের মাশুল আদায়ের তালিকা টাঙানো রয়েছে। গত ১২ মে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত খেয়া পারাপারের মাশুল আদায়ের ওই তালিকায় উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের সীতারামপুর করিম শাহ মাজার পর্যন্ত খেয়াঘাট পারাপারে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০ টাকা; অন্যান্য খেয়াঘাট পারাপারে ৫ টাকা; প্রতিটি গরু, মহিষ ও ঘোড়ার জন্য ১০ টাকা; মোটরসাইকেল ৪০ টাকা করে ভাড়া আদায়ের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ওই তালিকায় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করায় প্রতিদিন ঘাটের লোকজনের সঙ্গে যাত্রীদের কথা-কাটাকাটি হয়।

ভুক্তভোগী কয়েকজন যাত্রী অভিযোগ করেন, খেয়া পারাপারের জন্য আগে জনপ্রতি ১০ টাকা এবং মোটরসাইকেল ৪০ টাকা করে আদায় করা হতো। কিন্তু এখন অভিনব কায়দায় যাত্রীদের কাছ থেকে ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে রহস্যজনক কারণে নীরব রয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাড়ার তালিকা সংগ্রহ করেছি। থানা–পুলিশকে বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। ভাড়া বেশি আদায় করা হলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করবেন।’

খেয়াঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে জানান, ওই ঘাট দিয়ে খেয়া পারাপারে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘ওই ঘাটের ইজারা পাওয়ার জন্য আমরা চারজন দরপত্র জমা দিয়েছি। এখনো কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। তবে বর্তমানে আমরাই ওই ঘাট চালাচ্ছি।’

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল আলম বলেন, ‘ওই ঘাটে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা ঝোলানো রয়েছে। আমাদের ওই তালিকার বাইরে গিয়ে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’