ঢাকা মেডিকেলে করোনায় মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফাইল ছবি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ফাইল ছবি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগীর মৃত্যুহার বেশি। এ পর্যন্ত দেশের এই শীর্ষ হাসপাতালে ২ হাজার ১৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৬৩ জন। মৃত্যুহার ১২ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।

রাজধানীতে ১৬টি হাসপাতালে এখন করোনার চিকিৎসা হচ্ছে। এর মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ইউনিট-১ ও বার্ন ইউনিট), মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের চিকিৎসা বিষয়ে কিছু তথ্যসংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মৃত্যুহার সবচেয়ে কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, দেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে মৃত্যুহার বেশি।

রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এ পর্যন্ত হাসপাতালে ৫ হাজার ৩০০ রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সামান্য কিছু রোগী পুলিশ সদস্যের পরিবারের সদস্য। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় মৃত্যুহার শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। হাসপাতালের পরিচালক হাসানুল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, একাধিক কারণে মৃত্যুহার কম। একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হওয়ার কারণে সদস্যদের কারও উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্রই তাঁরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। দ্বিতীয়ত, সদস্যদের বয়স কম, তাই ঝুঁকিও কম। তৃতীয়ত, পুলিশ হাসপাতাল একটি বিশেষ চিকিৎসাবিধি (ট্রিটমেন্ট প্রটোকল) অনুসরণ করে চিকিৎসা দিচ্ছে, যাতে ফলও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া পরীক্ষার সুযোগ থাকায় কারও সময় নষ্ট হয় না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে প্রায় দুই মাস আগে মৃত্যু কমিয়ে আনতে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটি। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে মুগদা জেনারেল হাসপাতাল কিছু মৃত্যুর পর্যালোচনাও করেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিট এবং হাসপাতাল ইউনিট-২-এ করোনার চিকিৎসা চলছে। করোনা রোগীর জন্য সাধারণ শয্যা আছে ৮৮৩টি ও আইসিইউ শয্যা আছে ২৪টি। এই হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা ছাড়াও ৬২৮টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৩টি হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা এবং ৩০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে।

>

করোনায় মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী নয়
মৃত্যু বন্ধ বা কমিয়ে আনা সম্ভব
এর জন্য কারণ অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ জরুরি

তারপরও মৃত্যুহার বেশি কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, দুটো কারণে মৃত্যুহার বেশি মনে হচ্ছে। প্রথমত, অন্য হাসপাতালের খারাপ রোগী ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয় বা রেফার করা হয়। এসব রোগীর মৃত্যুঝুঁকি বেশি। দ্বিতীয়ত, বাড়িতে চিকিৎসা নেওয়া রোগীরা পরিস্থিতি খারাপ হলে সর্বশেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে তাঁরা ঢাকা মেডিকেলেই আসেন।’ তিনি বলেন, শুরুর দিকের চেয়ে বর্তমান সময়ে মৃত্যুহার কমে গেছে।

মৃত্যুহারে ঢাকা মেডিকেলের পরই আছে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল। এই হাসপাতালে মৃত্যুহার ৯ শতাংশ। এর পরের অবস্থান কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের। এই হাসপাতালে ১০০ রোগী ভর্তি হলে ৮ জন মারা যাচ্ছেন। দেশের এই দুটি হাসপাতালে প্রথম করোনা রোগী চিকিৎসা শুরু হয়।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুরুর দিকে এই হাসপাতালেও মৃত্যু বেশি হতো। ঢাকা মেডিকেলে করোনার চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর থেকে এখানে রোগীর চাপ ও মৃত্যু কমে আসতে দেখা গেছে।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও মৃত্যুহারও যথেষ্ট বেশি। এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার রোগী, এর মধ্যে মারা গেছেন ১৭৮ জন। মৃত্যুহার ৬ শতাংশ। এই হাসপাতালে মারা যাওয়া প্রথম ৯৩টি মৃত্যু পর্যালোচনা করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ও গবেষকেরা। তাতে দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ রোগী হাসপাতালে আসেন অনেক দেরি করে, যখন রক্তে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। আরও দেখা গেছে, ভেন্টিলেটরের সহায়তায় একজন রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ও জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, করোনায় মৃত্যু নিয়ে দেশে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা এখনো হয়নি। তার জন্য বসে থাকা যাবে না। বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে করোনার চিকিৎসা ও মৃত্যুর তথ্য যা পাওয়া যাচ্ছে, তা-ই বিশ্লেষণ করা দরকার। মৃত্যু শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে এই বিশ্লেষণ কাজে লাগবে। বিশ্বের অনেক দেশে এমন হয়েছে।