২৫ বছর পর তাঁরাই আজ অপাঙক্তেও

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার নাসির উদ্দিন প্রধান দাখিল মাদ্রাসায় পুরোনো সাত শিক্ষক-কর্মচারীকে বাদ দিয়ে নতুন লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরননবী প্রধান এসব লোক নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

নতুন করে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার সুপার।

লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ১৯৯৪ সালে সাঘাটার মুক্তিনগর ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে স্থাপিত হয় নাসির উদ্দিন প্রধান দাখিল মাদ্রাসা। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ১৮ জন। শুরু থেকে এসব শিক্ষক-কর্মচারী বিনা বেতনে পাঠদান করছেন। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত হয়। ২১ নভেম্বর মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নুরুননবী প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীদের ডেকে জরুরি বৈঠকে বসেন। তখন নুরুননবী কৌশলে সুপারসহ ১৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর কাছে ঘুষ চান। এ সময় শিক্ষক-কর্মচারীরা ৫০ হাজার টাকা করে ৯ লাখ টাকা নুরুননবীকে দিতে রাজি হন। ইতিমধ্যে তাঁকে ৮ জনের ৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি ১০ জন কয়েক দিনের সময় নিয়েও টাকা দিতে পারেননি। এ কারণে শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য কাগজপত্র পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তাতে স্বাক্ষর করতে রাজি হননি সভাপতি।

মাদ্রাসার সহকারী সুপার মোজাম্মেল হক অভিযোগ করেন, ‘নুরুননবী প্রধান আমাকে প্রত্যেক শিক্ষক-কর্মচারীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা করে তুলে তাঁর কাছে জমা দিতে বলেন। তা না হলে তিনি আমার পরিবর্তে অন্য সহকারী সুপার নেবেন বলে হুমকি দেন। পরে তিনি অন্য একজনকে টাকার বিনিময়ে আমার পদে নিয়োগ দিয়েছেন।’

সুপার কাজী মাহফুজুল হান্নান অভিযোগ করেন, ‘২৫ বছর বিনা বেতনে পাঠদানের পর আমরা বেতনের মুখ দেখলেও আবার বঞ্চিত হচ্ছি শুধু ঘুষের টাকা না দেওয়ার কারণে। সভাপতি পুরোনো সাতজন শিক্ষক-কর্মচারীকে বাদ দিয়ে নতুনদের নিয়েছেন, যা নিয়মবহির্ভূত। এখন তাঁদের ভয়ে মাদ্রাসায় যেতে পারছি না।’

তবে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করে নুরুননবী প্রধান দাবি করেন, ‘আমি কোনো শিক্ষককে বাদ দিইনি। যাঁরা মাদ্রাসা গড়ে তুলেছেন, তিনি (সুপার) আমার ভাই, বোন, ভাগনেসহ সেই শিক্ষকদের বাদ দিয়েছেন। নতুন যাঁদের নাম এমপিওভুক্তির জন্য পাঠানো হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, তাঁরা পুরোনো শিক্ষক-কর্মচারী। যোগদানের পর তাঁদের বেতন দিতে না পারায় তাঁরা অন্যত্র কাজ করতেন।’

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের সভাপতি পুরোনো শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।