জলে ডুবে নষ্ট হচ্ছে আখ

জলমগ্ন আখখেত। নাটোরের লালপুর উপজেলার বৈদ্যনাথপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
জলমগ্ন আখখেত। নাটোরের লালপুর উপজেলার বৈদ্যনাথপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

নাটোরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকায় গত ৬০ দিনে ১ হাজার ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় এলাকার ১০ হাজার একর জমির আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলাবদ্ধতায় আখ শুকিয়ে যাচ্ছে এবং নানা ধরনের রোগ ও পোকামাকড়ে আক্রান্ত হচ্ছে।

পানি নিষ্কাশনের নালা ও খাল ভরাট হয়ে গেছে। তাই আখখেতের পানি দ্রুত সরে যেতে পারে না। জলাবদ্ধতায় ইতিমধ্যে ২ হাজার ৩৫৪ একর জমির আখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা না গেলে বাকি আখও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ আখ চাষ মৌসুমে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল এলাকায় ২৬ হাজার ৫০ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। গত বছর মাড়াই মৌসুম দীর্ঘায়িত হওয়ায় মুড়ি আখের আবাদ দেরি হয়। এ ছাড়া অনেকেই দেরিতে আখ রোপণ করেছেন। এ কারণে মে মাস থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টিতে অনেক জমির আখ পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো আখ খেতে বুকসমান পানি জমেছে। এতে আখের বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। আখে গোড়াপচা রোগ ও মাজরা পোকার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ডুবে যাওয়া অনেক জমির আখ শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে আখচাষিদের পাশাপাশি সুগার মিল কর্তৃপক্ষও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ, এ পরিস্থিতিতে আখের উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেবে। আখের অভাবে বন্ধ রাখতে হবে সুগার মিল। তখন চিনি আহরণের হারও কমে যাবে।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) কার্যালয় সূত্র জানায়, মিলের নিজস্ব বৃষ্টিপাত পরিমাপক যন্ত্রের হিসাবমতো চলতি বছরের মে মাসের ২০ তারিখে সর্বোচ্চ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আম্পান ঝড়ের প্রভাবে সেদিন বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১২১ দশমিক ৬৬ মিলিমিটার। এতে অধিকাংশ নিচু জমির আখ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সর্বশেষ ১৮ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৬ দশমিক ৪২ মিলিমিটার। এতে একের পর এক আখের জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

উত্তর লালপুর গ্রামের আখচাষি শামীম হোসেন বলেন, তাঁর তিন বিঘা আখের জমিতে মে মাস থেকে পানি জমে আছে। ঘন ঘন বৃষ্টি হওয়ায় জমি থেকে পানি সরছে না। নানা ধরনের রোগ ব্যাধি দেখা দিচ্ছে। অর্ধেক ফলনও পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ।

চামটিয়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাঁর পাঁচ বিঘা জমিতে পানি জমে থাকায় তিনি আখের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে পারছেন না। এতে উৎপাদন হ্রাস পাবে।

গত শনিবার দুপুরে বৈদ্যনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় জমির আখ পানিতে তলিয়ে আছে। আখের মাথা পচে গেছে। স্থানীয় আখচাষি মুজিবুর রহমান বলেন, তাঁর এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল আখ। বছরে এই একটা ফসল ফলিয়ে তাঁরা সংসার চালান। অথচ পানির কারণে এবার তাঁরা কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাবেন না। সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়বে।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) মনজুরুল হক জানান, এবার অতিবৃষ্টির কারণে মিল এলাকার ১০ হাজার একর আখের জমিতে জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। ইতিমধ্যে ২ হাজার ৩৫৪ একর জমির আখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা না গেলে বাকি আখও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবীর বলেন, আখ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই মিলের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। এখানকার পানি নিষ্কাশনের নালা ও খাল ভরাট হয়ে গেছে। আখ খেতের পানি দ্রুত সরে যেতে পারে না। তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও সুগার করপোরেশনের সঙ্গে কথা বলে জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করবেন বলে জানান।