রাতভর বৃষ্টি, পদ্মায় আবার বেড়েছে ২ সেন্টিমিটার পানি

পদ্মার পানি বাড়ায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। রোববার দুপুরে আমবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো।
পদ্মার পানি বাড়ায় রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। রোববার দুপুরে আমবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় গতকাল রোববার সারা দিনে ২ সেন্টিমিটার পদ্মার পানি কমলেও রাতভর ভারী বৃষ্টির কারণে ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফের ২ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ফলে উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি।

উপজেলার উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নের দুর্গম অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে বন্যার পানিতে থইথই করছে। অধিকাংশ পরিবার অর্ধডুবন্ত বসতঘরে তালা মেরে অন্যত্র চলে গেছে। এসব বাড়ি বন্যার পানিতে ভাসছে। মাঠের কোথাও পাট ছাড়া কোনো ফসল জেগে নেই। কেউ কেউ অর্ধডুবন্ত পাটগাছ কেটে নিচ্ছেন। অনেকে বাড়িতে নৌকার ওপর রান্না করছেন। চোর-ডাকাতের ভয়ে তাঁরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র যাচ্ছেন না। দুই সপ্তাহ ধরে এমন পরিস্থিতি চললেও এখন পর্যন্ত সরকারি সাহায্য–সহযোগিতা কিছুই পাননি বলে ক্ষুব্ধ বন্যার্ত মানুষ।

দৌলতদিয়া ইউনিয়নের তমিজ উদ্দিন মৃধা পাড়ার কৃষক হানিফ ফকিরের (৫৫) বাড়িতে ১০-১২ দিন ধরে পানি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাড়িতেই নৌকার ওপর দিন কাটাচ্ছেন। কখনো নৌকায় করে দূরে গিয়ে রান্না সেরে বাড়িতে ফিরছেন। আবার কখনো নৌকার ওপরই রান্না করছেন।

গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে হানিফ ফকির ও তাঁর স্ত্রী ঘর থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বের করে অন্যত্র যাচ্ছিলেন। আলাপকালে তাঁরা বলেন, ১০-১২ দিনের বেশি হলো পানিতে ভাসছেন। বাড়ির উঠানে কোমরসমান ও ঘরের ভেতরে হাঁটু পানি। কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই। তাঁরা কী অবস্থায় আছেন, কী খাচ্ছেন কোনো মেম্বার, চেয়ারম্যান তা খোঁজ নেননি। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সাহায্য–সহযোগিতা পাননি।

গৃহবধূ সুফিয়া বেগম বলেন, ‘বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। গরু-ছাগল দূরের এক আত্মীয়ের বাড়ি রাইখা আইছি। তারপরও রাতে চোর-ডাকাতের ভয়ে এহানে নৌকার ওপর থাহি। রাতে চোর-ডাহাতের সাথে সাপ-পোহার ভয়ও করে।’

উজানচরের চর করনেশনা গ্রামে বাস করেন সকিনা বেগম। অথচ ভোটার পাশের দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের। তিনি বলেন, ‘১০-১২ দিন ধইরা ঘরে পানি। পায়খানা-টিউবওয়েল ডুবে গেছে। রান্না করতে পারি না। আমরা মরলাম না বাঁচলাম কেউ খোঁজ নেয়নি। একবার মেম্বার আইসা ঘুইরা দেইখা গেছে। কিছু দিয়ে যায়নি।’ তিনিও ঘরের কিছু জিনিস নিয়ে ছোট্ট একটি টিনের ডিঙি নিয়ে নিরাপদে যাচ্ছিলেন।

এ বিষয়ে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর খান বলেন, হাসান মোল্লা পাড়া, নৈমদ্দিন খার পাড়া, তমিজ উদ্দিন মৃধা পাড়া, দুলাল ব্যাপারী পাড়া, সিরাজ খার পাড়া, সৈদাল খার পাড়ার এক হাজারের বেশি পরিবার দুই সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পায়নি। এসব এলাকার মানুষ প্রতিনিয়ত তাঁর কাছে আসছে। কিন্তু তিনি কিছু না পেলে তাদের কোথা থেকে দেবেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু সাঈদ মণ্ডল বলেন, উপজেলার উজানচর, দৌলতদিয়া, দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউনিয়নের সাড়ে সাত হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকার ২ হাজার ২৫০টি পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল ও ২০০ প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কাছে আরও ৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।