তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত, ঘাটে যানজট

পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। সোমবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
পদ্মায় স্রোতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ঘাটের উভয় পাড়ে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। সোমবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

অস্বাভাবিকভাবে পানি বাড়ায় পদ্মায় প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। এতে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি পারাপারে তিন গুণ সময় লাগায় উভয় পাড়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আজ সোমবার উভয় ঘাটে সহস্রাধিক গাড়ি আটকেছিল। এতে যাত্রী ও পরিবহনশ্রমিকেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, পদ্মা নদীতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্রোত স্বাভাবিক থাকলে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি পারাপারে যেখানে সর্বোচ্চ এক ঘণ্টা সময় লাগে সেখানে এখন সময় লাগছে তিন ঘণ্টারও বেশি।

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি কার্যালয় সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মায় পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় কাঁঠালবাড়ি ফেরি ও লঞ্চঘাটের সব পন্টুনের চারপাশে পানিতে তলিয়ে গেছে। মাঝনদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। স্রোতের বেগ সামলাতে না পারায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথের ১৪টি ফেরি উভয় ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। স্রোতের বেগ সামলে সোমবার সকাল থেকে চলছে দুটি রো রো, দুটি কে-টাইপ ও একটি ছোট ফেরি। এই ৫টি ফেরি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ সময় নিয়ে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার করছে।

সোমবার বেলা দুইটার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) শিমুলিয়া ঘাটের মেরিন কর্মকর্তা আহমদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় ১০ সেন্টিমিটারের মতো পানি বেড়েছে। ফলে নদীতে স্রোতের তীব্রতা এখন খুবই বেশি। ফেরি ছাড়া হলে সেই ফেরিগুলো স্রোতের বেগ সামলে গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশি সময় চলে যায়। একটি ফেরি আসা–যাওয়া নিয়ে ৬ ঘণ্টা ও ফেরিতে গাড়ি তুলতে আরও এক ঘণ্টা চলে যায়। একটি ফেরি মোট ৭ ঘণ্টা সময় নিচ্ছে। তাই ঘাটে যানবাহনের চাপ বেশি।’

সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট ঘুরে দেখা যায়, ঘাটের প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ সরি। ঘাটের চারটি টার্মিনাল পণ্যবাহী ট্রাকে পরিপূর্ণ। সংযোগ সড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাকের বিশাল লাইন। ঘাটে নতুন আসা পণ্যবাহী ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে মাইকিং করে বিকল্প পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ ও ঘাট কর্তৃপক্ষ। স্রোতের তীব্রতায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। এসব নৌযান পদ্মার স্রোতের তীব্রতা উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়েই নদী পাড়ি দিচ্ছে। ফলে এ নৌপথে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।

সোমবার বেলা দেড়টায় ঢাকাগামী পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ইলিয়াস হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশাল থেকে রোববার বিকেলে দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসছি। এখনো রাস্তায় সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছি। একটুও সামনে আগাইতে পারি নাই।’

ফেরিতে নদী পারাপারে বেশি সময় লাগায় মো. সাইদুল নামে এক যাত্রী স্পিডবোটে কাঁঠালবাড়ি থেকে শিমুলিয়া যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘ঘাটে ঠিকমতো ফেরি নাই। যা চলে তা–ও অনেক সময় নেয়। লঞ্চেও অনেক ভিড়, তাই স্পিডবোটে উঠেছি।’ এভাবে ঝুঁকি নিয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্রুত যেতে হবে তাই ঝুঁকি মেনেই উঠেছি। আর লাইফ জ্যাকেটও পরেছি। আল্লাহর রহমতে কিছু হবে না।’

ঢাকা থেকে মাদারীপুরগামী যাত্রী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ৯টায় শিমুলিয়া ঘাটে এসে দেখি বিশাল লাইন। পন্টুনের চারপাশ পানিতে ভর্তি। মোটরসাইকেল নিয়ে পন্টুন বেয়ে ফেরিতে ওঠা খুবই ঝুঁকি। তাই দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে উল্টো ঘুরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথ ধরে মাদারীপুরে আসি।’

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্রোতের তীব্রতার কারণে রাতে ফেরি বন্ধ রাখি। দিনে খুবই সীমিত আকারে ফেরি চলে। যা চলে তা পারাপারে দ্বিগুণের বেশি সময় লাগে। তাই ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকসহ কয়েক শ যানবাহন আটকা পড়েছে। এ পরিস্থিতি কবে নাগাদ ঠিক হবে, তা এখনো ঠিকমতো বলতে পারছি না।’

কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরি না চলায় আমাদের ঘাটে সাত শর মতো গাড়ি আছে। এখানে টার্মিনালে ৮ থেকে ১০ দিন আগেরও ট্রাক আটকা পড়ে আছে। ফেরি ঠিকমতো না চলায় ট্রাকগুলো পারাপার হতে পারছে না। আমরা আমাদের সাধ্যমতো যানবাহনগুলো নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।’