ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি, শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কে পাঁচ দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ, বিকল্প সড়কও বেহাল

শেরপুর: মেরামত ও সংস্কার না করায় শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সেই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। আজ মঙ্গলবার সকালে সড়কের চকশাহাব্দী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
শেরপুর: মেরামত ও সংস্কার না করায় শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সেই সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। আজ মঙ্গলবার সকালে সড়কের চকশাহাব্দী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটির পোড়াদোকান ও শিমুলতলি এলাকার কজওয়ের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পাঁচ দিন যাবৎ ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়ক দিয়ে জামালপুরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতের অভাবে এ সড়কও বেহাল হয়ে পড়েছে।

গত বছরের বন্যা ও চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রবল বর্ষণের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এটি এখন এলাকাবাসী ও যানবাহন চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ফলে হাজারো মানুষ পড়েছেন দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে।

এলজিইডি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়কটির দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩ দশমিক ৭ মিটার। শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কুসুমহাটি মোড়ে শুরু হয়ে বলাইয়েরচর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে জামালপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুতে গিয়ে সড়কটি শেষ হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়ক দিয়ে স্বল্প দূরত্বে জামালপুর জেলায় যাওয়া যায়।

চলতি বছরের বন্যার কারণে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় বিকল্প এ সড়কের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে। বর্তমানে এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক হালকা ও ভারী যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু সড়কটির প্রয়োজনীয় সংস্কার ও মেরামতের কাজ না হওয়ায় এলাকাবাসী ও যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এবং ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। বিশেষ করে বলাইয়েরচর ইউনিয়নের চকশাহাব্দী ফকিরগঞ্জ বাজার মোড় থেকে জামালপুর ব্রহ্মপুত্র সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। এখানে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

মেরামত ও সংস্কার না করায় শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সেই সড়কে আটকে যাওয়া অটোরিকশা ঠেলে পার করে দিচ্ছেন এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার সকালে সড়কের চকশাহাব্দী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
মেরামত ও সংস্কার না করায় শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সেই সড়কে আটকে যাওয়া অটোরিকশা ঠেলে পার করে দিচ্ছেন এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার সকালে সড়কের চকশাহাব্দী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে সড়কের চকশাহাব্দী এলাকায় দেখা যায়, সড়কটির অধিকাংশ স্থানে পিচ উঠে গিয়ে ইট-সুরকি বের হয়ে গেছে। সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে সড়কের দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে সড়কটি দেবে ও ভেঙে গেছে এবং সড়কে পানি জমে আছে। কর্দমাক্ত সড়কে যানবাহন আটকে যাওয়ায়, এলাকাবাসী তা ঠেলে পার করে দিচ্ছেন।

এ সময় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মুরাদ হোসেন জানান, বন্যায় শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প এই সড়ক দিয়ে যাত্রীদের আনা-নেওয়া করছেন। কিন্তু ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট ও ভোগান্তি হয়। প্রায়ই গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায় ও তা পাল্টাতে হয়। ফলে তিনি আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

বলাইয়েরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও চকশাহাব্দী গ্রামের বাসিন্দা সারোয়ার জাহান জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে সৃষ্ট গর্ত পানিতে ডুবে যায়। তখন ভাঙাচোরা এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। জরুরি ভিত্তিতে সড়কের ভাঙা অংশ মেরামত করা না হলে যেকোনো সময় বিকল্প এ সড়ক দিয়ে জামালপুরের সঙ্গে শেরপুরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মেরামত ও সংস্কার না করায় শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সেই সড়কে আটকে যাওয়া একটি ট্রলি ঠেলে পার করে দিচ্ছেন এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার সকালে সড়কের চকশাহাব্দী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
মেরামত ও সংস্কার না করায় শেরপুর-বলাইয়েরচর-জামালপুর বিকল্প সড়কটি বেহাল হয়ে পড়েছে। সেই সড়কে আটকে যাওয়া একটি ট্রলি ঠেলে পার করে দিচ্ছেন এলাকাবাসী। আজ মঙ্গলবার সকালে সড়কের চকশাহাব্দী এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

জানতে চাইলে এলজিইডির শেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জামালপুরের সঙ্গে শেরপুরের সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে বিকল্প সড়কটির ভাঙা অংশ দ্রুত মেরামতের জন্য তিনি সদরের উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছেন। আশা করা যায়, দু-এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করা হবে। তবে আপাতত ওই সড়কে ভারী যানবাহন না চালানোর জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।