নবীনগরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সহায়তার তালিকায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় করোনায় কর্মহীন হয়ে সংখ্যালঘু হতদরিদ্রদের ত্রাণের সহায়তার তালিকায় বিত্তবানদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নিজের কোটিপতি আপন ভাতিজার নামও তালিকাভুক্ত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলার ত্রাণসহায়তার সনাতন ধর্মাবলম্বী ২১০ জনের একটি তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে ও তালিকাসূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে সারা দেশে অসংখ্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হতদরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তাঁরা এখনো সরকারি কোনো ত্রাণসহায়তা পাননি। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সব জেলা ও উপজেলা কমিটিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মহীন মানুষের তালিকা প্রস্তুত করে জুনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানোর জন্য চিঠি দেয়। সেই মতো নবীনগর উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ উপজেলার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তালিকা প্রস্তুত করে।

উপজেলা কমিটির পাঠানো তালিকায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সীতানাথ সূত্রধর নিজের ধনাঢ্য আপন ছোট ভাই শ্রীনাথ সূত্রধরের ছেলে পলাশ সূত্রধর, আরও দুই আপন ভাতিজা প্রফুল্ল সূত্রধর ও অমর সূত্রধরের নামও অন্তর্ভুক্ত করেন। উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুনীল দেব জীবন ও সাধারণ সম্পাদক সীতানাথ সূত্রধর স্বাক্ষরিত ওই তালিকায় স্থানীয় একাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীর নামও রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘পরিষদ ২১০ জনের নামের একটি তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছে। সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তালিকায় নিজেদের স্বজনদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নিজের আত্মীয়দের মধ্যে প্রায় ৩৫ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। অথচ কেন্দ্রীয় কমিটির পাঠানো চিঠিতে কেবল সংখ্যালঘু হতদরিদ্রদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে পাঠানোর জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।’

সারা দেশ থেকে ইতিমধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার সংখ্যালঘু হতদরিদ্রের নামের তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব নাম যাচাই–বাছাই করে চলতি মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে।

নবীনগর উপজেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিনয় চক্রবর্তী বলেন, ‘দরিদ্রদের বদলে নিজের কোটিপতি ভাইয়ের ছেলেসহ স্বজন ও বিত্তবানদের নাম ত্রাণের তালিকায় দেওয়াটা মোটেই ঠিক হয়নি। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের আত্মমর্যাদা নিয়ে সমালোচনা হবে, যা কখনো কাম্য হতে পারে না।’

নবীনগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সীতানাথ সূত্রধর প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিন্দুদের মধ্যে যাঁদের অর্থ ও সম্পদ দুটোই আছে, কিন্তু করোনায় বিপদে থেকেও লজ্জায় কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারছেন না, তাঁদের নামই তালিকাভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি সহায়তা আমি আনিনি, আর আত্মসাৎও করিনি। ভুলবশত হয়তো তালিকায় আমার ভাতিজার নাম কেউ অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমার বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ অপপ্রচার করার চেষ্টা করছেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যুৎ নাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা শুনেছি। তবে উপজেলা কমিটির নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেননি। যাঁরা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করছিলেন, তাঁরাই দু-একটি নাম এদিক-ওদিক করেছেন হয়তো। তাঁদের তালিকা সংশোধন করে আবার পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, তালিকায় কোনোভাবেই স্বজন ও বিত্তবানদের নাম গ্রহণ করা হবে না। পরিষ্কার বলা আছে, তালিকায় শুধু কর্মহীন হতদরিদ্রদের নাম থাকতে হবে।