প্রশাসক নিয়োগের নথি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তুত

আগামী সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগের তোড়জোড় চলছে। এ–সংক্রান্ত একটি নথি মন্ত্রণালয় প্রস্তুত করে রেখেছে। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত বর্তমান মেয়রের মেয়াদ আছে। এরপর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিতে পারেন একজন প্রশাসক।

বর্তমান মেয়র প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন নাকি নতুন কাউকে এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা স্পষ্ট নয়। নতুন প্রশাসক পদে বসাতে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে। রাজনীতিবিদ না হলে একজন সরকারি আমলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বাধীন পঞ্চম পরিষদের সাধারণ সভা ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নাছির মেয়র হয়েছিলেন। স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী তাঁর মেয়াদ ৫ আগস্ট শেষ হচ্ছে। যদিও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণের বিস্তার ঘটায় অন্যান্য নির্বাচনের মতো চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনও ২১ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। স্থগিত হওয়া নির্বাচনে ছয়জন মেয়র প্রার্থী ছিলেন। 

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ চট্টগ্রাম সিটিতে প্রশাসক নিয়োগের নথি তৈরি আছে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটিতে কে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাবেন, সে ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকনির্দেশনা দেবেন। প্রশাসক পদে ব্যক্তিটির নামের জন্য তাঁর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি আমরা। তবে ৫ আগস্টের আগে যেকোনো সময় চট্টগ্রাম সিটিতে প্রশাসক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হবে। নাম আজ পাওয়া গেলে কালই প্রশাসক নিয়োগের ঘোষণা আসবে।’ 

চট্টগ্রাম সিটিতে নতুন প্রশাসক হিসেবে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ছাড়াও একঝাঁক আওয়ামী লীগের নেতা আছেন। বিশেষ করে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কে যোগ্য, এ–সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত গোয়েন্দা এবং রাজনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেখান থেকে উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সাংসদ ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটিতে বর্তমান মেয়র নাকি তৃতীয় ব্যক্তি কেউ প্রশাসক নিয়োগ পাচ্ছেন, তা আমাদের প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ জানেন না। আসলে কে প্রশাসক হচ্ছেন, সে সম্পর্কে নিশ্চয়ই খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আমি এখনো কারোর নাম শুনিনি।’

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুটি ধারা রয়েছে। একটির নেতৃত্বে ছিলেন প্রয়াত মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তাঁর মৃত্যুর পর নেতা-কর্মীরা জ্যেষ্ঠ ছেলে ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর দিকে চলে গেছেন। অন্যটির নেতৃত্বে আছেন বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। এই দুই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক কখনো উষ্ণ ছিল না। মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব সব সময় ছিল। শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারীরা তাঁদের কাছের কাউকে প্রশাসক হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের একাধিক রাজনৈতিক নেতা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি।’

স্থগিত হওয়া নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন বর্তমান মেয়র ও চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। তাঁর বদলে মনোনয়ন পান একই কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন নগর শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন। জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সব প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেটা ভালো মনে করেন, তা-ই হবে।’