পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু, চাপে পাউবো

পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প। নড়িয়ার কেদারপুর এলাকায় নদীর তীর তলিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ
পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প। নড়িয়ার কেদারপুর এলাকায় নদীর তীর তলিয়ে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় শরীয়তপুরের ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে পদ্মা নদীতে এবং নড়িয়া-সদর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে কীর্তিনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। গত সাত দিনের ভাঙনে প্রায় আড়াই শ পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের চলমান কাজের সাতটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে পাউবো। সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, পদ্মা নদীর পানি গত কয়েক দিন ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আজ বুধবার নড়িয়ার সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এ কারণে নদীতে স্রোত বৃদ্ধি পেয়েছে। স্রোতে ভাঙন বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের চলমান কাজের সাতটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছে পাউবো। নড়িয়ার সুরেশ্বর হতে জাজিরার বিলাসপুর পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার তীর রক্ষার কাজ চলছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে। ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ৯ কিলোমিটার জায়গায় ইতিমধ্যে ৪৩ লাখ বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এখন চলছে সিসি ব্লক ফেলার কাজ।

এমন অবস্থায় প্রকল্পটি যেন ভাঙনের হুমকিতে না পড়ে, সে জন্য উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। মাল্টিভিম মেশিন দিয়ে নদীর তলদেশের স্রোত ও ভাঙনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেই তথ্য অনুযায়ী নড়িয়ার সুরেশ্বর দরবার শরিফ, সাধুর বাজার, চণ্ডীপুর, কেদারপুর, পূর্ব নড়িয়া, ঈশ্বরকাঠি ও জাজিরার বিলাসপুর এলাকাকে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। চার দিন ধরে এই স্থানগুলোতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম আহসান হাবীব বলেন, নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পাউবো মারাত্মক চাপে রয়েছে। নড়িয়া-জাজিরার যে তীর রক্ষার প্রকল্পের কাজ চলমান আছে, তা যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে, সে জন্য সাতটি স্থানে অতিরিক্ত বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পদ্মা ও কীর্তিনার আরও ১৪টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেখানেও বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

নদীর তীর তলিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকায় বিপদে পড়েছে মানুষ। ছবি : প্রথম আলো
নদীর তীর তলিয়ে লোকালয়ে পানি ঢোকায় বিপদে পড়েছে মানুষ। ছবি : প্রথম আলো

পাউবো সূত্র জানায়, নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরোপয়েন্ট, ওকিলউদ্দিন মুন্সিকান্দি, বড়কান্দি ইউনিয়নের দুর্গাহাট, নাজিম উদ্দিন ব্যাপারীকান্দি, নড়িয়ার ঘরিসার ইউনিয়নের চরমোহন, বাংলাবাজার, চরআত্রা ইউনিয়নের বসাকেরচর, কীর্তিনাশা নদীর নড়িয়ার মোক্তারের ইউনিয়নের ঢালীপারা, সদরের পালং ইউনিয়নে কোটাপারা, ডোমসার ইউনিয়নের মুন্সিরহাট এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হকের নির্দেশে এসব স্থানে ভাঙন রোধের জন্য বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।

জাজিরার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের জিরো পয়েন্ট এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, সাত দিন ধরে এলাকাটি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এই কয়েক দিনে এখানকার দুই গ্রামের প্রায় দেড় শ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। বন্যার পানিতে এলাকা নিমজ্জিত। তার ওপর নদীভাঙন মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ এ কে এম এনামুল হক বলেন, ‘ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নড়িয়ার-জাজিরার যে প্রকল্পের কাজ চলছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। কোনো ধরনের বিপর্যয়ে না পড়তে হয়, সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নির্ধারণ করে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’