ছেলে হত্যার বিচার না পেলে কী নিয়ে বাঁচব?

সাইদুর রহমান পায়েল
সাইদুর রহমান পায়েল

নদীতে ফেলে দেওয়ার আগে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল মুখটা। ফলে দুই দিন পর যখন সাইদুর রহমান পায়েলের লাশ ভেসে উঠল, তখন সেটি আর দেখার অবস্থায় নেই। ততক্ষণে বিকৃত হয়ে গেছে। তাই শোকের সাগরে ডুবে থাকা মাকে শেষবারের মতো দেখানো হয়নি ছেলের ক্ষতবিক্ষত মুখ।

নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়ে সাইদুর রহমানের চলে যাওয়ার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল বুধবার। এই দিন ছেলের ছবি ছুঁয়ে চোখের পানি ফেলা, মুঠোফোনের রেকর্ডারে জমে থাকা ছেলের গলার আওয়াজ শুনে আর পারিবারিক অনুষ্ঠানে ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ঘোরাফেরার দৃশ্য দেখে কেটেছে মা কোহিনূর বেগমের।

সেসব আঁকড়ে বেঁচে থাকা এই নারী বলেন, ‘ছেলেকে তো শেষবারের মতো দেখার পরিস্থিতিও তারা রাখেনি। এখন শুধু দেখতে চাই একটা জিনিসই, সেটি হলো ছেলে হত্যার বিচার।’

এই সাইদুর রহমান ছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ২০১৮ সালের ২১ জুলাই হানিফ এন্টারপ্রাইজের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফেরার পথে নিখোঁজ হন পায়েল। ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ভবের চরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। এরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে, পায়েল বাথরুমের কথা বলে গাড়ি থেকে নেমেছিলেন। পুনরায় গাড়িতে ওঠার সময় আহত হয়েছিলেন তিনি। রক্তাক্ত পায়েলকে হাসপাতালে পাঠানোর পরিবর্তে মুখ থেঁতলে নদীতে ফেলে দেন বাসের কর্মীরা। এ ঘটনায় বাসের চালক, চালকের সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা করেন সাইদুরের মামা গোলাম সরোয়ার্দী।

ছেলের মৃত্যুর পর ২৯ বছরের প্রবাসজীবনকে বিদায় দিয়েছেন বাবা গোলাম মওলা। এখন বৃষ্টি-জলাবদ্ধতা যা-ই হোক, তাঁর প্রতিদিনের শিডিউল একটাই—ছেলের কবরের পাশে গিয়ে সময় কাটানো। ছেলের মৃত্যুদিনে যেন আরও শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন এই বাবা। তিনি বলেন, ‘বিচার পেতে সব জায়গায় দৌড়েছি। কিন্তু এখনো বিচার পেলাম না। ছেলে হারিয়ে যদি বিচারটাও না পাই, আমরা কী নিয়ে বাঁচব?’

মামলার বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

মামলার বাদী গোলাম সরোয়ার্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখনো দুজনের সাক্ষ্য নেওয়া বাকি আছে। তাঁদের সাক্ষ্য নেওয়ার পর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হবে। এরপর আশা করছি মামলার রায় হবে।’

তবে মামলার ধীরগতিতে হতাশ পায়েলের মা কোহিনূর বেগম। আদরের ছোট ছেলের মৃত্যুর পর একঘরে হয়ে পড়া এই মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাষ্ট্র বা পরিবহনমালিকের কাছে আমি কোনো ক্ষতিপূরণ চাই না। শুধু আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই। কিন্তু দুই বছরেও বিচার পেলাম না। যেভাবে ধীরগতিতে মামলার কার্যক্রম চলছে, তাতে বিচার পাওয়া নিয়ে আমি শঙ্কিত।’