গাইবান্ধায় ডুবে গেছে ১০ হাজার শৌচাগার, ভরসা নৌকা বা ভেলা

বন্যার পানিতে ডুবে আছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মধ্য উড়িয়া গ্রাম। ছবি: প্রথম আলো
বন্যার পানিতে ডুবে আছে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মধ্য উড়িয়া গ্রাম। ছবি: প্রথম আলো

বন্যায় গাইবান্ধার ৫টি উপজেলার ২৯টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার শৌচাগার পানিতে ডুবে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকায় পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকা। নৌকা বা কলার ভেলার ওপর থেকে উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিক কাজ সারতে হচ্ছে।

গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যাকবলিত গাইবান্ধার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০ হাজার শৌচাগার পানিতে ডুবে গেছে। ফুলছড়ি উপজেলার মধ্য উড়িয়া গ্রামের কৃষক কাশেম মিয়া (৫৫) বলেন, ‘বন্যায় আমার তিনটি ঘর ডুবে গেছে। পানিতে নষ্ট হয়েছে আসবাব। ঘরবাড়ির পাশাপাশি বন্যার পানিতে পায়খানার ঘরটি ভেসে গেছে। কলার ভেলায় দূরে গিয়ে কাজ সেরে আসছি।’

একই গ্রামের গৃহিণী জোবেদা খাতুন (৫০) বলেন, ‘এবারক্যা বানোত হামার ঘরে দুইটে ঘর ডুবি গেচে। পায়খানার ঘরকোনা নষ্ট হচে। বানের মদ্দে হামরা কষ্ট করি কলার গাছের ভেলাত করি পায়খানা–প্রসাবখানার কাম সারব্যার নাগচি।’ একই গ্রামের আকলিমা বেগম (৪৫) বলেন, ‘বানোত হামরঘরে তিনটে ঘর নষ্ট হচে। পায়খানার ঘর ভাসি গেচে। না খায়া একব্যালা থাকা যায়। কিনতো প্রসাব–পায়খানা না করলে থাকা যায় না। তাই বাড়ির পিছোনোত বাঁশ দিয়া মাচা বানাচি। তার উপর কাপোড় দিয়া ঘিরে পায়খানার ঘর বানাচি।’ পার্শ্ববর্তী বালাসি গ্রামের জহুরুল মিয়া (৩৫) বলেন, ‘সগলোরে পায়খানার ঘর নষ্ট হচে। সগলে খারাপ অবসতাত আচে।’

একই গ্রামের স্কুলশিক্ষক সাখাওয়াত হোসেন জানান, বন্যার সময় পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসাইন প্রথম আলোকে জানান, আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চারটি উপজেলায় ৮৩টি পায়খানা নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো বাঁধ ও উঁচু জায়গায় বসানো হয়। আরও পায়খানার ঘর নির্মাণ করা হবে।

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। প্লাবিত হয়ে আছে নদীতীরবর্তী গাইবান্ধার পাঁচটি উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও ১৭ সেন্টিমিটার কমলেও তা বিপৎসীমার অনেক ওপরে রয়েছে। ঘাঘট নদের পানি ১৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। আজ দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আজ দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, জেলার সব নদ–নদীর পানি কমে যাচ্ছে। তবে দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে পানি সামান্য করে বাড়ছে।