সরাইলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সবাই। ইতিমধ্যে উপজেলায় উঠতি কাঁচা ও আধা পাকা আউশ ধান, কিছু বীজতলা, সবজিখেত, মুরগির খামার, পুকুর ও অনেক পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার ও গতকাল বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অরুয়াইল ইউনিয়নের রানীদিয়া, রাজাপুর, কাকুড়িয়া, ধামাউড়া, দুবাজাইল, বারপাইকার; পাকশিমুল ইউনিয়নের জয়ধরকান্দি, তেলিকান্দি, হরিপুর, ষাটবাড়িয়া, বরইচারা, ফতেহপুর, পরমানন্দপুর, কালীশিমুল, সিদ্ধেশ্বরী; পানিশ্বর ইউনিয়নের পানিশ্বর, সোলাবাড়ি, দেওবাড়িয়া, শাখাইতি, নাইলা, টিঘর; চুন্টা ইউনিয়নের ঘাগড়াজুর, বড়বল্লা, নোয়াহাটি; শাহজাদাপুর ইউনিয়নের শাহজাদাপুর, ধাউরিয়া, নিয়ামতপুর; নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ধল্লা, চানপুর তেরকান্দা ও বুড্ডা গ্রামের লোকজন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গ্রাম থেকে বের হওয়ার জন্য নৌকাই তাঁদের একমাত্র ভরসা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বছর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে ১ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ১২৫ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে গেছে। টাকার হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার জানান, পানি দ্রুত সরে না গেলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গে জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।

১০ বছর আগে উপজেলার হাওরাঞ্চলে নির্মিত সরাইল-অরুয়াইল সড়কের পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূইশ্বর বাজারের পর থেকে কালীশিমুল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য সড়কটির উচ্চতা বৃদ্ধি না করেই গত জুনে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এর সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পানির তোড়ে সড়কটির সদ্য সংস্কার করা অংশ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অরুয়াইলের সঙ্গে সড়কপথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, সরাইল-অরুয়াইল সড়কটির উচ্চতা বৃদ্ধি না করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে এর সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন সাধারণ বর্ষার পানিতেই সড়কটি তলিয়ে গেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা জলে গেছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ এস এম মোসা বলেন, ‘হাওরাঞ্চলে নির্মিত সরাইল-অরুয়াইল সড়কের কিছু অংশ অতিরিক্ত পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ার খবর পেয়েছি। এখনো পানি বাড়ছে। পানি সরে না গেলে সড়কগুলোর জন্য আপাতত কিছু করণীয় নেই।’

এ ছাড়া তলিয়ে গেছে বড্ডাপাড়া-তেরকান্দা পাকা সড়ক, আঁখিতারা-বুড্ডা পাকা সড়ক, সূর্যকান্দি-নোয়াগাঁও পাকা সড়ক, শাহবাজপুর-শাহজাদাপুর সড়ক, সরাইল-পানিশ্বর পাকা সড়ক, চুন্টা-ঘাগড়াজুর পাকা ও কালীকচ্ছ-চানপুর পাকা সড়ক।

পানি বৃদ্ধির কারণে অনেক মুরগির খামার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অনেক খামার। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো তথ্য সংগ্রহ করিনি। কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শুরু করব।’

ইতিমধ্যে পানিতে ভেসে গেছে কয়েক শ পুকুরের মাছ। এতে মাছচাষিরা বিরাট ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন। তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাইমুনা জাহান বলেন, ‘উপজেলার দু-এক জায়গা থেকে পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পেয়েছি। করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো আমরা কোনো জরিপ করিনি। এমন কোনো নির্দেশনাও আসেনি।’