সুনামগঞ্জে কম বৃষ্টিতে স্বস্তি, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা

সুনামগঞ্জে সড়কে পানি থাকায় নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পূর্ব নতুনপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জে সড়কে পানি থাকায় নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছে মানুষ। বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ পৌর শহরের পূর্ব নতুনপাড়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে আজ বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টি হয়নি। সকালে কিছু সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও দিনের অন্য সময় ছিল রোদ। একই সময়ে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টি হয়েছে কম। ফলে সুরমা নদীর পানি কমছে। এতে মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি লক্ষ করা গেছে। তাই জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, এমনটা আশা করছে সবাই।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা তিনটায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। বুধবার একই সময়ে সেখানে পানি ছিল বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হয়েছে ১০০ মিলিমিটার। একই সময় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ৩৮ মিলিমিটার। মূলত চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি কম হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নেই। এ কারণে সুরমা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে।

তবে হাওর এলাকার পানি কমেছে খুব সামান্যই। জেলার সব কটি উপজেলা ও পৌরসভা কমবেশি বন্যাকবলিত। দীর্ঘ প্রায় এক মাসের বন্যায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছে। মানুষের ঘরবাড়িতে এখনো বন্যার পানি আছে। রাস্তাঘাটের ওপর পানি থাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। জেলার সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, জামালগঞ্জ উপজেলার মানুষ বন্যাকবলিত বেশি। জেলা সদরের সঙ্গে এখনো চারটি উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটে বন্যার পানি রয়েছে। শহরের আবুল হোসেন রোড, পূর্ব নতুনপাড়া, শান্তিবাগ, হাজিপাড়া এলাকার মানুষ নৌকায় চলাচল করছে।

পূর্ব নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা ঝন্টু দাস (৪০) বলেন, তাঁদের বাড়িতে প্রথম দফা বন্যায় পানি ঢুকেছিল, এখনো আছে। পাশাপাশি ছয়টি ঘরেই পানি। ঘরের ভেতর এক খাটের ওপর আরেক খাট তুলে উঁচু করে তাতে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে বাস করছেন। ঝন্টু দাসের স্ত্রী রিতা রানী দাস বলেন, ‘এক মাস ধইরা বড় যন্ত্রণার মইধ্যে আছি। রান্না করতে, ঘুমাইতে সমস্যা। পানির মধ্যে গন্ধ ধরিলিছে (পানি থেকে গন্ধ হচ্ছে)।’

পূর্ব নতুনপাড়া এলাকায় এখনো রাস্তাঘাটে কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এই এলাকার মানুষ নৌকা নিয়ে চলাচল করছে। আশপাশের গ্রামের কিছু মানুষ ছোট ছোট নৌকা নিয়ে এসেছেন পারাপার করার জন্য। এ থেকে কিছু টাকা আয় হচ্ছে তাঁদের।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামের সরোয়ার মিয়া (৬৫) একটি ছোট নৌকা নিয়ে এসেছেন পূর্ব নতুনপাড়া এলাকায়। সঙ্গে ছেলে কাওসার আলম। সরোয়ার মিয়া জানান, তিনি বর্গাচাষি। সামান্য ধান ছিল, সেগুলো শেষ। এখন হাত খালি, কোনো কাজ নেই। তাই এখানে দুই দিন ধরে নৌকা নিয়ে আছেন। সারা দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা আয় হয়। সরোয়ার মিয়া বলেন, ‘তিনবার বইন্যায় মানুষ এখন অসহায়। মানুষ পানির মাঝে কষ্টে আছে। কয়েকটা দিন মেঘ (বৃষ্টি) না অইলে পানি নামি জিব (নেমে যাবে)।’

ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে প্রথম দফা বন্যা দেখা দেয় গত ২৫ জুন। এক সপ্তাহ পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আবার দ্বিতীয় দফা বন্যা শুরু হয় ১০ জুলাই। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আগেই আবার ১৮ জুলাই শুরু হয়েছে ভারী বৃষ্টি। এতে তৃতীয় দফা বন্যা দেখা দেয় সুনামগঞ্জে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী প্রীতম পাল বলেন, ‘মূলত চেরাপুঞ্জিতে বুধবার কম বৃষ্টি হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কমেছে। বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি হয়নি। যেহেতু সুনামগঞ্জ এবং উজানে বৃষ্টি কম হচ্ছে, তাই আশা করছি পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’