বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি, উদ্বিগ্ন কৃষক

রাজবাড়ীতে পাটখেতে বন্যার পানি। সম্প্রতি সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কাঠুরিয়া গ্রাম থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো
রাজবাড়ীতে পাটখেতে বন্যার পানি। সম্প্রতি সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কাঠুরিয়া গ্রাম থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

রাজবাড়ীতে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শহর রক্ষা বেড়িবাঁধের বাইরের পুরো চর এলাকায় আবাদ করা বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। খেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চরম অনিশ্চয়তায় মধ্য দিন কাটাতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। বন্যায় ৯ হাজার ৬২২ বিঘা জমির ফসলহানি হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষকেরা এসব তথ্য দিয়েছেন।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, পাঁচটি উপজেলা নিয়ে রাজবাড়ী জেলা। এর মধ্যে চারটি উপজেলাই পদ্মার তীরে। এগুলো হচ্ছে রাজবাড়ী সদর, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশা। এসব উপজেলার এক হাজার ২৮৩ হেক্টর (৯ হাজার ৬২২ বিঘা) জমির ফসল বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৯৭২ বিঘার জমির পাট, ২ হাজার ১০ বিঘা বোনা আউশ, ২৪০ বিঘার রোপা আউশ, ২১০ বিঘার তিল, প্রায় ১ হাজার ২৮২ বিঘার বোনা আমন, ৭৫ বিঘা রোপা আমনের বীজতলা ও ৮৩৩ বিঘার বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন সবজি আছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার চরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় খেতের বিভিন্ন ফসল তলিয়ে আছে। কিন্তু অনেক খেতের পাট পানির ওপরে কিছুটা মাথা বের করে আছে। তুলনামূলক উঁচু এলাকার পাটগাছ মাথা বের করে আছে। তবে পাটগাছের নিচের অংশ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। তিলগাছের শুধু ডাঁটা বের হয়ে আছে। গাছ থেকে ফল ঝরে পড়েছে।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর তিনটি অংশে ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি হ্রাস পেয়েছে। রাজবাড়ীর মহেন্দপুর ও পাংশার সেনগ্রাম পয়েন্টে চার সেন্টিমিটার ও গোয়ালন্দের দৌলতদিয়ায় সাত সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে তিন পয়েন্টেই পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।

সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কাঠুরিয়া গ্রামের কৃষক আবদুস সামাদ ব্যাপারী বলেন, পদ্মায় সাধারণত পানি শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি সময়ে আসে। কিন্তু এবার আষাড় মাস শেষ হওয়ার আগেই চলে এসেছে। এ কারণে কৃষকেরা ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তিনি তিন বিঘা জমিতে আমন, দুই বিঘা জমিতে পাট, সাত বিঘা জমিতে তিল আবাদ করেছিলেন। এর মধ্যে শুধু তিন বিঘা জমির তিল ঘরে তুলতে পেরেছিলেন। ওই তিল তিনি ১৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তবে তিল আরও পরিপক্ব হলে ভালো দাম পেতেন। জমির ধান দিয়ে আগামী ছয় মাস চলতে পারতেন। বন্যায় ধান নষ্ট হওয়ায় এবার হয়তোবা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে সংসার চালাবেন।

কাঠুরিয়া গ্রামের আরেক কৃষক ফিরোজ ব্যাপারী বলেন, ‘পাঁচ বিঘা জমির তিলের মধ্যে দুই বিঘার তিল বাড়ি নিতে পেরেছি। এ ছাড়া দেড় বিঘা জমির পাট, চার বিঘা জমির আমন ধান, আধা বিঘা জমির পটোল নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আগামী দিনগুলো অনিশ্চয়তায় কাটাতে হবে।’

পাংশার চররামনগর গ্রামের বাসিন্দা মালেক প্রামাণিক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে বাদাম চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। এখন আবার পাট ও ধানে ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। ১২ বিঘা জমিতে পাট ও ১৪ বিঘা জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে অন্তত আট মণ করে পাট ও ধান সাত থেকে আট মণ করে পেতাম । কিন্তু হিসাব করে লাভ নেই। কোনো কিছুই ঘরে তুলতে পারি নাই। কেউ বলবে না, ১০ কেজি চাল নিয়ে যাও। আমাদের ক্ষতির কথা বলে কি লাভ হবে?’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাস বলেন, জেলায় মোট জমির পরিমাণ ৭৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। বন্যায় প্রায় চার কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাটচাষিদের। যেসব কৃষক রোপা আমন ধানের চাষ করেছেন, তাঁদের জন্য দেড় মেট্টিক টন ধানের বীজতলা তৈরি করা হবে। এসব বীজতলার চারা কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে। জেলার চরাঞ্চলের সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।

রাজবাড়ী-১ আসনের সাংসদ কাজী কেরামত আলী বলেন, ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পদ্মায় পানি বাড়তে পারে। তবে এখন তেমন ভাঙন নেই। পানি কমার সময় ভাঙন শুরু হবে। পাউবোকে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে।