বাংলাদেশে করোনায় নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যু ৪ গুণ বেশি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নারীর চেয়ে পুরুষের মৃত্যুহার বেশি। এ পর্যন্ত পুরুষ মারা গেছেন ৭৯ শতাংশ এবং নারীর মৃত্যু ২১ শতাংশ। অর্থাৎ মৃত প্রতি ৫ জনে চারজনই পুরুষ। আর একজন নারী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষের চেয়ে নারীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং শৃঙ্খল জীবনযাপন বেশি করে। এ ছাড়া অসংক্রামক রোগও পুরুষের বেশি। তাই পুরুষের সংক্রমণ ঝুঁকি বেশি এবং মৃত্যুহারও বেশি।

আজ বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে বাংলাদেশে করোনায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৮০১ জন। এর মধ্যে নারী ৫৯২ জন অর্থাৎ ২১ শতাংশ এবং পুরুষ ২ হাজার ২০৯ জন অর্থাৎ ৭৯ শতাংশ। এ ছাড়া আজ মারা যাওয়া ৫০ জনের মধ্যে পুরুষ ৪১ জন ও নারী ৯ জন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত দেশে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১০ জনের।

করোনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে লিঙ্গ পার্থক্য বিষয়ে গত জুনে নিউইয়র্ক টাইমসে একটি মতামত প্রকাশিত হয়। যেখানে বলা হয়, নারীদের চেয়ে পুরুষেরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বেশি মারা যাচ্ছে। ইতালিতে ৫০ এর ঘরে থাকা পুরুষেরা ৫০ এর ঘরে থাকা নারীদের চেয়ে চারগুণ বেশি মারা গিয়েছিলেন। আর বিশ্বব্যাপী এটা দ্বিগুণ। এ প্রতিবেদনে বলা হয়, স্প্যানিশ ফ্লুর সময়েও পুরুষেরা বেশি মারা গিয়েছিল। এ ছাড়া ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণের সময়েও একই চিত্র ছিল।

নিউইয়র্ক টাইমসের ওই মতামত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকটি বিশ্লেষণ ইতিমধ্যে প্রমাণ করেছে, যে জায়গায় নারীদের তুলনায় পুরুষদের করোনায় মৃত্যুর হার বেশি, সেখানে পুরুষদেরও গড়ে ধূমপান এবং ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের মতো আচরণের হারও অনেক বেশি।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ পুরুষের মৃত্যু হার বেশি হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অসংক্রামক রোগ পুরুষদের বেশি হয়। যেমন- ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, লিভারের রোগ, স্ট্রোক পুরুষদের বেশি হয়। এগুলো যদি বেশি থাকে তাহলে করোনায় আক্রান্ত হলে ঝুঁকি বেশি। সারা বিশ্বে পুরুষদের মধ্যে ধূমপান, অ্যালকোহল, নেশা জাতীয় দ্রব্য নেওয়ার পরিমাণ নারীর চেয়ে বেশি। ফলে পুরুষের মৃত্যু ঝুঁকিও বেশি থাকে।

এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ’আমাদের দেশে পুরুষদের তুলনামূলক বেশি বাইরে যেতে হয়। যখন বাইরে থাকে তখন হয়তো স্বাস্থ্যবিধি হয়তো সেভাবে মানে না। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষেরা ততটা শৃঙ্খলা মানে না। বাইরে ঘোরাফেরা, আড্ডা বেশি দেয়। এটা সব দেশেই হয়।’

হরমোনের কারণেও পুরুষের মৃত্যু হার বেশি হতে পারে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, মেয়েদের ইমিউনিটি বেশি পুরুষের চেয়ে। মেয়েদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও পুরুষের বেশি। এ ছাড়া বলেন, স্বাস্থ্য বিধি মানার জন্য যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়- শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘরে থাকা- তুলনামূলকভাবে এসব নারীরা বেশি মানে। সব মিলিয়ে পুরুষদের সংক্রমণের সংখ্যা ও মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।

পুরুষের মৃত্যু হার বেশি হওয়ার কারণ এখনো গবেষণার বিষয় বলে জানান, বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা যদি শুধু বাংলাদেশে হতো তাহলে ধরা যেত যে নারীদের চেয়ে পুরুষেরা বাইরে বেশি যায়। তাই পুরুষ বেশি মারা যায়। কিন্তু সারা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে নারীর মৃত্যু হার কম, পুরুষের বেশি। পশ্চিমা বিশ্বে নারী, পুরুষ, প্রবীণ সবাই নিজ নিজ প্রয়োজন অনুযায়ী বের হয়। বাংলাদেশেও নারীরা অনেকে বাইরে বের হচ্ছেন। এটা গবেষণার বিষয়। কোনো কোনো গবেষক অনুমান করছেন যে এখানে হরমোনের কোনো বিষয় আছে কিনা। এটা গবেষণা না করে সঠিক কিছু বলা যাবে না।’

মুশতাক হোসেন বলেন, পুরুষ এবং নারীর হরমোনের পার্থক্য আছে। তবে এখন পর্যন্ত অনুমান যে হরমোনের কোনো পার্থক্যের জন্য এটা হতে পারে। যদি হরমোনের পার্থক্যই হয়ে থাকে তাহলে তার ওষুধও বের হয়ে যাবে। অনেক ধূমপানসহ পুরুষের জীবনযাপনের বিষয়গুলোকে তুলে আনছেন। এ ব্যাপারে মুশতাক হোসেন বলেন, পশ্চিমা বিশ্বসহ অনেক দেশে নারীরাও ধূমপান করে এবং তাদের জীবনাচরণের পার্থক্য কম। কিন্তু সেখানেও তো একই চিত্র। তিনি মনে করেন, সামনে এর আরও গবেষণা আসবে। তখন আসল চিত্রটা বের হবে।