ঘরে থেকে থেকে বাইরের পৃথিবী যেন অচেনা

চার মাসের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ। দেখা নেই শিক্ষক আর বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। লাল–সবুজ পতাকার নিচে সমস্বরে আর গেয়ে ওঠা হয় না, ‘আমার সোনার বাংলা/ আমি তোমায় ভালোবাসি’। করোনাভাইরাসের সংক্রমণে স্বাভাবিক দিনযাপনের যে বদল ঘটেছে, তার অন্যতম ভুক্তভোগী শিশুরাও। তারা যেন বাইরের পৃথিবীটা ভুলে গেছে, তাদের জগৎটা এখন চার দেয়ালে বন্দী।

বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনভ্যস্ততায় শিশুরা এখন আর বাইরে যেতে চায় না। আর গেলেও চমকে ওঠে আশপাশের শব্দে, অচেনা মানুষ দেখে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শিশুদের চেনা পরিবেশে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। এই ধাক্কা কত বড় হয়ে দেখা দেবে? সময় স্বাভাবিক হলে তা নিজ থেকেই কেটে যাবে নাকি ফেলে যাবে দীর্ঘমেয়াদি ছাপ? এ নিয়ে উৎকণ্ঠা রয়েছে অভিভাবক মহলে।

শিশুদের নিজস্ব জগৎ তৈরিতে পরিবারের পর সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা ঘরবন্দী। অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থী যুক্ত থাকতে পারলেও সবাই সে সুযোগ পাচ্ছে না। প্রযুক্তির একচেটিয়া রাজত্বে মেধার চেয়ে আর্থিক সক্ষমতা সেখানে মুখ্য।

গত ২০ জুন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক শিক্ষার্থীদের ওপর কোভিড–১৯–এর প্রভাব নিয়ে একটি জরিপ প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী উদ্বেগ ও আতঙ্কে রয়েছে। আট বিভাগের ১৬টি জেলায় ব্র্যাকের ওই জরিপে অংশ নেয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে পড়ুয়া ১ হাজার ৯৩৮ শিক্ষার্থী।

৫ বছর বয়সী আদিবা অদরিতি রাজধানীর নেভি অ্যানকোরেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের নার্সারি শ্রেণিতে পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে হইহই করতে করতে স্কুলবাসে করে স্কুলে যাওয়া, পড়া, পড়ার ফাঁকে খেলা, ক্লাস শেষে স্কুলের মাঠে দৌড়ানো, স্লিপারে চড়া, বাসায় এসে খাওয়া, খেলা, টেলিভিশন দেখা, ঘুম—তার দিনলিপির এই চেনা ছক পাল্টে গেছে।

আদিবার মা ফারজানা রহমান জানালেন, অনলাইনে ক্লাস করার কারণে বন্ধুদের সঙ্গে মুঠোফোনের পর্দায় দেখা হয়, সেটাকেই এখন ‘বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া’ বলে ধরে নিয়েছে আদিবা। মেয়েটা আর আগের মতো মিশুক নেই। অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মূল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে সরাইল উপজেলার দেওড়া গ্রামে থাকে মাইশা খানম (১০)। পরীক্ষা নেই, ক্লাস নেই বলে বাড়িতে পড়ার তাগাদা অনুভব করে না। তার ভাষায় ‘মাঝে মাঝে পড়ি’। মাইশা জানাল, সংক্রমণের ভয়ে বাবা–মা বাসা থেকে বের হতে দেয় না। তার নিজেরও অনেক ভয় লাগে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকোর ২১ জুলাইয়ের হিসাব অনুসারে, ১০৭টি দেশে এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে। কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাব পড়েছে ১০৬ কোটি ৬৮ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫ জন শিক্ষার্থীর ওপর। এটা বিশ্বজুড়ে ঘরবন্দী থাকার নজিরবিহীন উদাহরণ হিসেবে দেখছে শিশু তহবিল ইউনিসেফ।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ‘বাংলাদেশ: ফ্রম লার্নিং ক্রাইসিস টু আ পেনডেমিক’ শীর্ষক পৃথক জরিপ এসেছে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যেও বর্তমান পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে। জরিপে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের আগে শিক্ষার্থীদের ৮৭ শতাংশ সুখী ছিল। এখন তা কমে ৭২ শতাংশ। আগে ৭৩ শতাংশ জীবনযাপন নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত ছিল। এখন সে হার কমে ৫৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এ গবেষণায় মুঠোফোনের মাধ্যমে অংশ নেয় গ্রাম ও শহরের বস্তি এলাকার সরকারি–বেসরকারি স্কুল ও মাদ্রাসার ৫ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ গ্রামের। আর ২৫ শতাংশ শহরের বস্তি এলাকার।

ঘরবন্দী সময়ে পাল্টে গেছে রুটিন

ঘরবন্দী সময়ে শিশুদের জগতে ঘটে গেছে বড় ধরনের পরিবর্তন। মধ্যবিত্ত–উচ্চবিত্ত পরিবারের শহুরে শিশুরা অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে মুঠোফোন, গেমস আর ডিভাইসনির্ভর হয়ে পড়েছে। সংক্রমণ নিয়ে অভিভাবকদের অতি সচেতনতায় ঘর থেকে বের হওয়া হয় না তাদের। আর গ্রামের শিশুদের বেশির ভাগ অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ পাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা নেই, সেভাবে দুরন্তপনায় আর মেতে ওঠা হয় না। শহরে বস্তিবাসী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য এনজিও পরিচালিত স্কুলগুলোর কার্যক্রমও এখন সীমিত।

>

বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে
তবে সেগুলো সীমিত আকারে
মানসিকভাবেও ভালো নেই অনেক শিশু

বিআইজিডির গবেষণায় বলা হয়েছে, স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় ১০ ঘণ্টা সময় ব্যয় করত, এখন ব্যয় হয় ২ ঘণ্টা। আগের চেয়ে পড়াশোনা কমেছে ৮০ শতাংশ। নিজে শেখা স্কুলে শেখার বিকল্প হতে পারে না। মহামারি শেষে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে নেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। এ ছাড়া প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা প্রতিশ্রুতিশীল, তবে তা এখনো ততটা সুবিধাজনক নয়।

মিরপুর–১২ নম্বরের টেকেরবাড়ির বাসিন্দা ব্র্যাক স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. ইসমাইলের (১১) ক্লাস এখন সপ্তাহে দুই দিন চলে। মুঠোফোনে ক্লাস করে সে। ক্লাসে কী শিখিয়েছে জিজ্ঞেস করতেই সুকুমার রায়ের ‘শব্দদূষণ’ ছড়াটি গড়গড় করে বলে গেল। ‘গরু ডাকে হাঁস ডাকে ডাকে কবুতর/ গাছে ডাকে শত পাখি সারা দিনভর।’

ইসমাইলের মা আসিয়া জানালেন, তিনি বাড়িতে বাড়িতে খণ্ডকালীন গৃহসহকারী হিসেবে কাজ করেন। স্বামী ফায়েজউদ্দিন মাটি কাটার শ্রমিক। বাড়িতে ইসমাইলকে পড়ানোর মতো কেউ নেই।

ব্র্যাক স্কুলে ইসমাইলের শিক্ষক অঞ্জনা হালদার জানালেন, তাঁদের স্কুল বন্ধ থাকায় এখন রুটিন মেনে ক্লাস করা হয় না। বাবা–মায়ের সুবিধামতো সময় অনুযায়ী মুঠোফোনে গ্রুপ করে ক্লাস চালাচ্ছেন তিনি।

শরণ্য শিখর রাজধানীর ইংরেজি মাধ্যম স্কুল সানবিমসের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সে জানাল, লকডাউনের কারণে মার্চ থেকে তাদের স্কুল বন্ধ। এ সময়ের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ছুটিও ছিল। জুন থেকে জুন শিক্ষাবর্ষ হিসাবে সে এখন নতুন ক্লাসে উঠেছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি, ক্লাসের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের উত্তীর্ণ ধরা হয়েছে। শরণ্য জানাল, জুনের মাঝামাঝি থেকে অনলাইনে জুমের মাধ্যমে তাদের নতুন ক্লাস শুরু হয়েছে।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রথমে ইউটিউবে ক্লাস নেওয়া শুরু করে। এখন ইউটিউবে ‘নূন বাতায়ন’ নাম দিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। পাশাপাশি জুমেও ক্লাস হচ্ছে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির রসায়ন বিভাগের প্রধান বাদরুল আলম বলেন, প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের ২৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করছে। এ ছাড়া ‘নূন বাতায়ন’–এ ভিকারুননিসার পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস করার সুযোগ পাচ্ছে। একেকজন শিক্ষকের ক্লাসে সারা দেশ থেকে ৪০ হাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থী অংশ নেয়। তাঁর মতে, স্কুলের বিকল্প অনলাইন হতে পারে না। কারণ, স্কুলের পরিবেশ একজন শিক্ষার্থীর মানসিক গঠনে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটায়।

রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মাহির আহনাফের মা জাকিয়া আক্তার জানান, স্কুলের দ্বিতীয় বার্ষিক পরীক্ষাও অনলাইনে নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের ৩০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পবিত্র ঈদুল আজহার পর ৭০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। মা–বাবাকে পরীক্ষকের ভূমিকা পালন করতে বলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে পড়া এগিয়ে নিতে অনেক শিক্ষার্থীর কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনিও অনলাইনে চলছে। মাস্টারমাইন্ড স্কুল থেকে এ লেভেল পরীক্ষার্থী মিদৌরী ফাইজাহ্ আবেদিন স্কুলের ক্লাসের পাশাপাশি প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিং অনলাইনে করছে বলে জানিয়েছে।

বিকল্প শিক্ষায় বৈষম্য বেশি

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। তবে সেগুলো সীমিত আকারে। কারণ টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ–সংযোগ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী করোনাকালীন দূরশিক্ষণে অংশ নিতে পারছে না। দেশে বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম ও মাদ্রাসাশিক্ষার মধ্যে যে বৈষম্য রয়েছে, সেই একই বৈষম্য দেখা দিয়েছে অনলাইন ক্লাস ঘিরে।

লকডাউনে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি তমো হজুমির বক্তব্যেও এসেছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে তিনি বলেছেন, যত বেশি শিশু স্কুল থেকে দূরে থাকবে, তাদের সংস্কারের সুযোগ তত কমে আসে। বাংলাদেশে কোভিড–১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিশুদের বিকল্প শিক্ষার পথ তৈরি করাই অবশ্যই কঠিন একটি কাজ।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন চলমান সংকটের সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে সংসদ টেলিভিশন চ্যানেলের পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতার থেকেও শিক্ষার্থীদের জন্য দূরশিক্ষণ ক্লাস পরিচালনার কথা জানিয়েছেন।

তবে মাঠপর্যায়ের তথ্য বলছে, অনেক শিক্ষার্থী এ সুযোগ পাচ্ছে না। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা গ্রামের কৃষক গৌরাঙ্গ শীলের ছেলে শুভ্রজিৎ শীল কালিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। দুজনের কেউ দূরশিক্ষণ ক্লাস সম্পর্কে কিছু জানেন না। বাবা বললেন, ‘বাসায় টিভি আছে, কেব্‌ল সংযোগও আছে। তবে ইন্টারনেট নেই। টিভিতে ক্লাস হয় এমন কিছু জানি না। ছেলেকে আমরাই পড়াই।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার দেওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মেহেরিন খানম মা ও বোনের কাছে পড়ে। মা নার্গিস খানম বললেন, সংসদ টিভির কথা তিনি জানেন। তবে স্বামী কয়েক মাস ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ায় আর্থিক অনটনে রয়েছেন। তাই টিভি থাকলেও খরচ কমাতে কেব্‌ল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিআইজিডির ‘বাংলাদেশ: ফ্রম লার্নিং ক্রাইসিস টু আ পেনডেমিক’ শীর্ষক জরিপে বলা হয়েছে, সরকার টেলিভিশনের মাধ্যমে ‘ঘরে বসে শিখি’ ও ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’ নামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ কার্যক্রম চালু করলেও তা দেখছে কমসংখ্যক। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ৬২ শতাংশের বাসায় টেলিভিশন সুবিধা রয়েছে। তবে টেলিভিশনে ক্লাস দেখছে মাত্র ২৫ শতাংশ। ৩০ শতাংশের বাসায় ইন্টারনেটের সুবিধা আছে। তবে ইন্টারনেটে ক্লাস করছে মাত্র ২ শতাংশ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের বাসিন্দা মাইশা খানমের বাবা মো. মাজহারুল হক খান দেওড়া পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

মাজহারুল হক খান বললেন, তাঁর স্কুলের শিক্ষার্থীসংখ্যা ৩৮৬। স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্র পরিবারের। তাদের স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেট নেই। তাই অনলাইন ক্লাসের মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। সংসদ টিভির মাধ্যমে পাঠদান কর্মসূচি শুরু হলেও তাঁর গ্রামের শিক্ষার্থীরা খুব একটা উপকৃত হচ্ছে না।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পৌনে ২ কোটি। এনজিও পরিচালিত আর কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে সোয়া লাখের বেশি। মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সোয়া কোটির কিছু বেশি।

শিশুদের পাশে থাকা জরুরি

ইউনিসেফ ও ইউনেসকো করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মানসিকভাবে চাঙা রাখতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিশুদের নিয়ে তৈরি ভিডিও তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করছে।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু–কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘ সময়ের ঘরবন্দী সময়ের কারণে শিশু–কিশোরদের সামাজিক দক্ষতা কমে যেতে পারে, অন্তর্মুখী হয়ে উঠতে পারে। তাই এখন আলাদা করে প্রতিটি শিশুকে সময় দিতে হবে। স্ক্রিন টাইম অর্থাৎ টেলিভিশন, মুঠোফোন, ট্যাবে সময় দেওয়া কমাতে হবে। এ সময়টা কোনো অবস্থাতে ৪০ মিনিটের বেশি যেন না হয়। এর পরিবর্তে ইউটিউবে শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক বেশ কিছু উপাদান আছে, সেগুলোতে আগ্রহী করে তুলতে হবে।

শিক্ষার্থীদের সাহস জোগানোর জন্য তাদের প্রতি ইতিবাচক আচরণের ওপর জোর দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার্থীদের ওপর কোভিড–১৯–এর প্রভাব নিয়ে ব্র্যাকের জরিপে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার এই সময়ে নিপীড়নের শিকার হয়েছে ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৮২ শতাংশ নিপীড়ন মানসিক। তবে শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন, ঘরে বন্ধ করে রাখা বা জোর করে কাজ করানোর মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৯৩৮ জন শিক্ষার্থী।

ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা কর্মকর্তা শাবনাজ জাহেরীন বলেছেন, এ সময়ে বাবা–মায়ের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও দুশ্চিন্তার প্রভাব শিশুদের ওপরও পড়ছে। লকডাউনে বেশি সময় ঘরে থাকায় শিশুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অখণ্ড অবসর পেয়ে অনলাইনে বেশি ঝুঁকেছে, অচেনা বন্ধু তৈরি করেছে। ফলে অনলাইনেও অনেকে নিপীড়নের শিকার হয়েছে। বিশেষ এ পরিস্থিতিতে শিশুদের প্রতি মা–বাবাকে আরও যত্নবান হওয়া দরকার।