গাজীপুরে ৬ মাসে ছাঁটাই ১০ হাজার পোশাকশ্রমিক: শিল্প পুলিশ

গাজীপুরের টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: প্রথম আলো
গাজীপুরের টঙ্গীর সাতাইশ এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরে কিছু পোশাক কারখানা করোনাকালে জনবল কমিয়েছে। শিল্প পুলিশের হিসাবে, পোশাক কারখানা থেকে ছয় মাসে ছাঁটাই হওয়া কর্মীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। এর অধিকাংশই চাকরিচ্যুত হয়েছেন কোভিড-১৯ অতিমারির সময়।

জানতে চাইলে গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের এসপি মো. ছিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুরে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএরসহ ২ হাজার ৭২টি বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ১৫ লাখ ৮ হাজার ৪০৪ জন শ্রমিক কর্মরত। বিভিন্ন সংকটের কারণে এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত এসব কারখানার ১০ হাজার ৭৩৬ জন শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে করোনাকালেই বেশির ভাগ শ্রমিক ছাঁটাই হয়েছেন।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের তারগাছ এলাকায় ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেড নামের একটি কারখানায় প্রায় দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গত ১৯ মে কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো নোটিশ না দিয়েই শ্রমিক ছাঁটাই করে। ছাঁটাইয়ের খবরে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন।

গত ২৯ মে ছাঁটাই করা হয় গাজীপুর মহানগরের মালেকের বাড়ি এলাকায় টেকটেক্স ফ্যাশন লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায়। প্রতিবাদে ওই সময় শ্রমিকেরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। গাজীপুরে সীমিত পরিসরে কারখানায় উৎপাদন শুরুর ঘোষণার পর তাঁরা কাজে গেলে তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।

গাজীপুরে বিজিএমইএর ৮৩০টি, বিকেএমইএর ১৩৮টি, বিটিএমইএর ১২২টি এবং আরও ৯৮২টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় সব মিলিয়ে ১৫ লাখ ৮ হাজার ৪০৪ জন শ্রমিক কর্মরত।

একটি কারখানা থেকে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিক আফজাল হোসেন বলেন, তিনি ১২ বছর ধরে ওই কারখানায় চাকরি করছেন। কোনো অভিযোগ না থাকার পরও গত ১ জুন বেতন না দিয়ে তাঁকে কারখানা থেকে চাকরিচ্যুত করেছে কর্তৃপক্ষ। এ কারখানা থেকে একইভাবে তাঁর মতো আরও অর্ধশত শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন করোনার এ সংকটকালে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছি।’

টেকটেক্স ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিক শারমিন আক্তার বলেন, ‘পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে ওই কারখানায় চাকরি করছি। কোনো কিছু না বলে আমাকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলেছে, পরিস্থিতি ভালো হলে আবার চাকরিতে নেওয়া হবে। কিন্তু এই সময়ে আমরা চলব কীভাবে? এখন গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্যাজুয়াল ওয়্যার লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) মনির হোসেন বলেন, ওই সময় করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ক্রয় আদেশ বাতিল করেন। শ্রমিকদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছিল। তখন বাধ্য হয়ে কারখানা লে-অফ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছিল। বর্তমানে তাঁদের কাজ চলছে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের গাজীপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, করোনাকালে কারখানাগুলোয় শ্রমিক ছাঁটাই খুবই অমানবিক। করোনা মহামারির সময়ে শ্রমিকেরা তাঁদের দাবিদাওয়া আদায়ে জোরদার আন্দোলন করতে পারছেন না। এ সুযোগে মালিকেরা নানা অজুহাতে শ্রমিক ছাঁটাই করছেন, যা খুবই উদ্বেগজনক। সরকার এ বিষয়ে প্রথম দিকে ভূমিকা নিলেও শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধে এখন কোনো পদক্ষেপই নেই।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বলেন, করোনাকালে গাজীপুরে সাতটি কারখানা বন্ধ হয়েছে এবং এসব কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। চাকরি হারানো এই শ্রমিকেরা এখন মাঝেমধ্যেই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে কারখানা খুলে দিতে এবং তাঁদের চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবি আদায়ের চেষ্টা করছেন। আর তাঁদের নিবৃত্ত করতে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।