নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি

নওগাঁয় আত্রাই নদের বাঁধ ভেঙে ১০ দিন ধরে মান্দা ও আত্রাই উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ। শনিবার দুপুরে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকহরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
নওগাঁয় আত্রাই নদের বাঁধ ভেঙে ১০ দিন ধরে মান্দা ও আত্রাই উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রামের মানুষ। শনিবার দুপুরে মান্দা উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের চকহরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে নওগাঁয় বন্যা পরিস্থিতির আবার অবনতি হয়েছে। আত্রাই নদীর পানি শনিবার দুপুর ১২টায় মান্দার জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে ভাঙা বাঁধ দিয়ে আবারও প্লাবিত হয়েছে রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়ি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার থেকে নওগাঁয় টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। একই সময়ে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে নদীর উজানের ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম রাজ্যে। এ কারণে আত্রাই নদ দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢল বেড়েছে। এর ফলে ছোট যমুনাসহ অন্যান্য নদ-নদী ও জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে।

১৪ ও ১৫ জুলাই নওগাঁর মান্দা ও আত্রাই উপজেলার ছয়টি স্থানে বাঁধ ভেঙে মান্দার ৫টি ও আত্রাই উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এর দুই-তিন দিন পর থেকে আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীতে পানি প্রবাহ কমতে শুরু করে। এর ফলে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। গত ১৯ জুলাই আত্রাই নদের পানি মান্দার জোতবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই দিন ছোট যমুনা নদীর নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার নিচে। গত মঙ্গলবার থেকে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে আবারও পানি প্রবাহ বাড়তে শুরু করে। পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার মান্দা ও আত্রাই উপজেলায় অনেক এলাকা দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টায় মান্দার জোতবাজার পয়েন্টে আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে এবং ছোট যমুনার পানি নওগাঁ শহরের লিটন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল আলিম মণ্ডল বলেন, আত্রাই ও শিব নদের মাঝে কালিকাপুর ইউনিয়নটি অবস্থিত। এই দুই নদের বাঁধ ভেঙে ইউনিয়নের ২৬টি গ্রামের মধ্যে ২৪টি গ্রামই প্লাবিত হয়েছে। গত ১০-১২ দিন প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। ৬০০-এর বেশি পরিবারের জন্য ত্রাণ চাহিদা পাঠানো হলেও মাত্র ২০০ পরিবারের জন্য ত্রাণ এসেছে। ইতিমধ্যে সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আরও পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।

মান্দার বিষ্ণুপুর ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউনিয়নের দুই জায়গায় আত্রাই নদের বাঁধ ভেঙে ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কয়েক দিন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে আবারও রাস্তাঘাট তলিয়ে যেতে শুরু করেছে এবং ঘরবাড়িতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে মানুষজন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। ত্রাণ পর্যাপ্ত নয়। অনেক মানুষ অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁর মান্দা, আত্রাই, রানীনগর, পোরশা ও সাপাহার উপজেলার ৪৫টি গ্রামের ৪৫ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্যার্ত ৭৮৭টি পরিবারের মধ্যে ৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই বন্যার্ত মানুষের নতুন নতুন তালিকা আসছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অসহায় সব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।