ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনে আগুন, রক্ষা পেল সবার চেষ্টায়

সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগির মাঝখানে চলন্ত অবস্থায় আগুন ধরে যায়। শনিবার ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো
সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের দুটি বগির মাঝখানে চলন্ত অবস্থায় আগুন ধরে যায়। শনিবার ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে কোনো যাত্রী হতাহত হননি এবং ট্রেনের ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। যাত্রী, স্থানীয় লোকজন ও ট্রেনের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করায় ট্রেনটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা-সিলেট রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের কর্মকর্তা–কর্মচারী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শনিবার বেলা তিনটার দিকে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছলে ট্রেনের পেছন দিকের শেষ দুটি বগির সংযোগস্থলে আগুনের সূত্রপাত হয়। কিছুক্ষণ পর পোড়া গন্ধ পেয়ে যাত্রীরা ট্রেনের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের বিষয়টি জানান। পরে সেখানে ট্রেন থামানো হয়। এ সময় আতঙ্কিত হয়ে ওই দুই বগিতে থাকা যাত্রীরা অন্য বগিগুলোতে চলে যান। একপর্যায়ে আগুন বেশি ছড়িয়ে পড়লে অধিকাংশ যাত্রী দ্রুত ট্রেন থেকে নেমে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ট্রেন থামানোর পরপরই ট্রেনের কর্মকর্তা–কর্মচারীরা ওই দুই বগির দিকে ছুটে যান। পরে তাঁরা ট্রেনের ভেতরে থাকা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বের করে এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় স্থানীয় লোকজন ও ট্রেনের যাত্রীরা ওই রেলপথের পাশের বিল থেকে বালতিতে করে পানি ও রাস্তা থেকে বালু নিয়ে দুই বগির সংযোগস্থলে দেন। তাঁদের ১৫-২০ মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে শেষের তিনটি বগির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ট্রেন সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ট্রেনের শেষ দিকের দুটি বগির মাঝখানে রাবার থাকায় আগুন দাউ দাউ করে বাড়ছিল। ট্রেন না থামালে আগুন বগির ভেতরে ছড়িয়ে পড়ত। তখন যাত্রীদের সমস্যা হতো এবং ট্রেনেরও ক্ষয়ক্ষতি হতো।

ওই ট্রেনের যাত্রী রেহেনা বেগম বলেন, ‘প্রথমবার একা ট্রেনে করে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি সিলেট যাচ্ছি। আর ট্রেনে আগুন ধরে যাওয়ায় অনেক ভয় পেয়েছি। আল্লাহর মেহেরবানিতে অল্পতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সব যাত্রী আতঙ্কিত হয়ে তাড়াহুড়ো করে ট্রেন থেকে নামতে শুরু করেন। এ সময় এক যাত্রী ট্রেনের ভেতর থেকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিতে চেষ্টা করছিলেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী মাস্টার মো. মাইনউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সদর উপজেলার ক্ষুদ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছলে চলন্ত ট্রেনে আগুন লেগে যায় বলে শুনেছি। পরে ওই ট্রেনের লোকজন নিজেরাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের দল সেখানে গিয়েছিল।’

কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের সুপারভাইজার মইজউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে ট্রেনের পেছনের দিকের ‘ট’ ও ‘ঠ’ বগির সংযোগস্থলে আগুন লেগে যায়। প্রথমে ট্রেন থামিয়ে ভেতর থেকে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র বের করে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। পরে ট্রেনের কর্মকর্তা–কর্মচারী, যাত্রী ও স্থানীয় লোকজন রেলপথের পাশে থাকা বিল থেকে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনের এক যাত্রী তাঁকে ট্রেনে আগুন লাগার কথা জানান। পরে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও পুলিশ সদস্যদের পাঠানো হয়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।